কেন্দ্রীয় যুবদলের এক নেতা বসে চা পান করায় তালা লাগিয়ে দেওয়া বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডের কাঁচামালের দোকানের (আড়ত) চাবি দোকানমালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে ওই চাবি ফেরত দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা।
এদিকে কেন্দ্রীয় ওই যুবদল নেতার সঙ্গে চা পান করার ছবি ফেসবুকে দেখে সার ব্যবসায়ী ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি আবদুর রহিমের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার রাতে মাহিলাড়া বাজারের ওই সারের দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দোকানে বসে চা পান করেন—এ কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া ওই বাজারের চায়ের দোকানটি আজ সকাল পর্যন্ত খুলতে দেওয়া হয়নি।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি ঘটনায় কেউ থানায় কোনো অভিযোগ দেননি। প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাকিরের দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটির ব্যাপারে তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গত শুক্রবার যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. কামরুজ্জামান ওরফে দুলাল মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডে তাঁর আত্মীয় জাকির হোসেনের কাঁচামালের দোকানে (আড়ত) বসে চা পান করেন। এর জেরে গত শনিবার ওই দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে মাহিলাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলমগীর কবিরাজসহ দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। আজ সকালে জাকির হোসেনকে ডেকে দোকানে লাগানো তালার চাবি দেওয়া হয়।
মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডে জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে আমাকে ডেকে পাঠান মাহিলাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলমগীর কবিরাজ। এ সময় তিনি আমাকে দোকানের চাবি দিয়ে বলেন, এখন থেকে ঠিকঠাক মতো ব্যবসা করবি, কোনো আজেবাজে লোক যেন দোকানে না বসে। পরে চাবি এনে সকাল ৯টায় দোকান খুলেছি।’
এ বিষয়ে আলমগীর কবিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকানে অবৈধ মালামাল আছে এবং মাদকাসক্ত সন্ত্রাসী ও সমাজবিরোধী লোকজন জড়ো হয়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানটি বন্ধ করা হয়েছিল। পরে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি, অভিযোগের সত্যতা নেই। তাই দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. কামরুজ্জামান বসে চা পান করার কারণে দোকান বন্ধ করা হয়নি।’
কোনো চাপে দোকান খুলে দিলেন কি না, জানতে চাইলে আলমগীর কবিরাজ বলেন, চাপে নয়। স্থানীয় লোকজন জানান, জাকির একজন ভালো মানুষ, তাই দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডে যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে বসে চা পান করার ছবি ফেসবুকে দেখে গতকাল রাতে স্থানীয় আবদুর রহিমের সারের দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবদুর রহিম মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. কামরুজ্জামান গত ১৪ বছরে এলাকায় আসেননি। তিনি মাহিলাড়ায় এসে জাকিরের দোকানে বসেছেন শুনে আমিও সেখানে যাই। কে বা কারা ওই ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছেন, তা জানি না। এরপর গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ নেতা–কর্মী দোকানে এসে ছবি দেখিয়ে আমার দোকানের শাটারে তালা মেরে বন্ধ করে দেন। পরে আমি আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ নেতাদের বিষয়টি জানিয়ে দোকান খুলে দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু তাঁরা দোকান খুলে দেননি।’
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর কবিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রহিমের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দলের অন্যান্য নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে দোকানটি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতা–কর্মীরা চা পান করায় বন্ধ করে দেওয়া মাহিলাড়া বাজারের চায়ের দোকান আজ সকাল পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়নি। গত রোববার সকালে ইউনিয়ন যুবলীগের নেতারা দোকানটি বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মাহিলাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. রাসেল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। যা জানি না, সে সম্পর্কে আমার কোনো বক্তব্য নাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলীম খানও। তিনি বলেন, ‘নুরুল ইসলাম চা বিক্রির আড়ালে মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন। এ বিষয়ে তাঁকে সতর্ক করা হলে ভয়ে তিনি নিজই দোকান বন্ধ রেখেছেন।’
দোকানটির মালিক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকান খুইল্লা দেওয়ার অনুরোধ নইয়া মুই হগোল নেতাগো দুয়ারে গেছি। কেউই দোকান খুইললা দিল না। মুই ৩০ বছর ধইরা এই ফুটপাতে চা বেইচ্চা পোলাপান লইয়া সংসার চালাই। দুই দিন ধরই চাউল কিনতে পারি না। এই জুলুম দেহার কেউ নাই। মুই মোগো এমপি স্যারের কাছে দোকান খোলার দাবি জানাই।’