নাটোরে আদালতে সাবেক এমপি শিমুলের ‘ছায়াসঙ্গী’ রাশেদুলকে মারধর, ছুড়ে মারা হলো মল
নাটোরের আদালতে নেওয়ার পর নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের ‘ছায়াসঙ্গী’ রাশেদুল ইসলাম ওরফে কোয়েলকে (৩২) বিক্ষুব্ধ জনতা মারধর করেছেন। একই সময় তাঁর শরীরে মল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে পাঁচটি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলায় পুনরায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আদালত পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল কুষ্টিয়া জেলার একটি মামলায় গ্রেপ্তার ছিলেন। নাটোর আমলি আদালতের ১০টি মামলায় পুনরায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য তাঁকে আজ সকালে হাজির করার নির্দেশনা ছিল। সে মোতাবেক বিপুলসংখ্যক পুলিশ সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে সদর আমলি আদালত চত্বরে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী সেখানে জড়ো হন। এ সময় রাশেদুলের বিভিন্ন মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীরাও আদালতে এসেছিলেন। তাঁরা রাশেদুলকে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা ১১টা থেকে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে সেনা সদস্যরা আদালত চত্বরে অবস্থান নেন।
বেলা পৌনে একটার দিকে বিশেষ পুলিশ বেষ্টনী দিয়ে রাশেদুলকে আদালত চত্বরে আনা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকে পড়েন এবং রাশেদুলকে কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। কেউ কেউ তাঁর মুখে ও শরীরে মল (মানববর্জ্য) ছুড়ে মারেন। তবে পুলিশ-সেনা ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরিয়ে দিয়ে রাশেদুলকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ সময় পুলিশের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা আদালতের কাছে ১০টি মামলায় রাশেদুলকে পুনরায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। একই সঙ্গে এসব মামলায় তাঁকে রিমান্ডে চাওয়া হয়। বিচারক রিমান্ড শুনানি পরে হবে বলে জানান। তবে ১০টি মামলায় তাঁকে পুনরায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁকে আবারও কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে নাটোর কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদুল ইসলাম ওরফে কোয়েল নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে নাটোরের বহু মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি মানুষের ঘৃণা ও আক্রোশ ছিল। এ কারণে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও কিছু লোক তাঁকে কিলঘুষি দিয়েছেন, মল ছুড়ে মেরেছেন।
নাটোর আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আমরা কঠোর নিরাপত্তা সহকারে রাশেদুল ইসলাম কোয়েলকে আদালতে হাজির করেছিলাম। তিনি আদালতের কার্যক্রম শেষে নিরাপদে কারাগারে ফিরে গেছেন।’ মারধরের প্রসঙ্গে পরিদর্শক মোস্তফা বলেন, ‘রাশেদুলের আসার কথা জানতে পেরে বিপুলসংখ্যক ক্ষুব্ধ মানুষ আদালত চত্বরে ভিড় করেছিলেন। ফলে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আদালতে নেওয়ার সময় কিছু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে তিনি পুলিশ হেফাজতে নিরাপদে কারাগারে ফিরে গেছেন।’