টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটকশূন্য, ক্ষতির মুখে নৌকার মালিকেরা

সুনামগঞ্জে পর্যটক নেই, তাই টাঙ্গুয়ার হাওরে যাচ্ছে না হাউসবোট। পৌর শহরের সুরমা নদীর সাহেববাড়ি ঘাটে বুধবার সকালেছবি: খলিল রহমান

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় এক সপ্তাহ সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটকশূন্য। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাওরে পর্যটক পরিবহনে থাকা হাউসবোট মালিক ও শ্রমিকেরা। তাঁরা বলছেন, এই কয়েক দিন পর্যটকদের নিয়ে কোনো নৌকা বা হাউসবোট হাওরে যেতে পারেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও হাওরে পর্যটক আসতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের নিয়ে হাউসবোটগুলো সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর সাহেববাড়ি ও ওয়েজখালী ঘাট থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে যায়। এরপর হাওর ও আশপাশের শহীদ সিরাজ লেক, লাকমা ছড়া, বারেকটিলা, শিমুল বাগান ও যাদুকাটা নদী ঘুরে দেখেন তাঁরা। দুই দিনের ভ্রমণ শেষে আবার এই ঘাটেই পর্যটকদের নামিয়ে দেওয়া হয়। আবার কিছু কিছু নৌকা তাহিরপুর উপজেলা থেকেও পর্যটকদের নিয়ে হাওরে যায়।

বুধবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর সাহেববাড়ি ঘাটে গিয়ে সারি করে রাখা হাউসবোট চোখে পড়ে। এসব বোটেই পর্যটকেরা হাওরে যান, ঘুরে বেড়ান এবং রাত যাপন করেন। বোটের ভেতর আলাদা কেবিন, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু কোনো পর্যটক আসতে না পারায় বোটের ভেতর কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। একেকটি বোটে ব্যবস্থাপক, মাঝি, পাচকসহ চার থেকে ছয় কর্মী থাকেন।

‘আরণ্যক’ নামের একটি বোটে ঢুকে কথা হয় এটির ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানীর (পান্থ) সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁদের দুটি হাউসবোট আছে। এবার হাওরে পর্যটক আসার মৌসুম শুরুর সময়েই বন্যার কারণে কয়েক দিন বোট বন্ধ রাখতে হয়েছে। হাওরে শুক্র ও শনিবার পর্যটক আসেন বেশি। এমনিতে পুরো মাসেই অনেকের বুকিং থাকে। কিন্তু এবার গত বুধবার থেকেই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার খবরে অনেক পর্যটক তাঁদের বুকিং বাতিল করেন। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় শুক্রবার কোনো বোট হাওরে যায়নি। যাঁরা শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ এসেছিলেন, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁদের অনেককে আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে।

একই বোটে থাকা আরেক তরুণ ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘প্রতিবার ভ্রমণে পর্যটকদের থাকা, খাওয়াসহ আমাদের নৌকা ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাড়া যায়। গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রিপ বন্ধ। এ সময় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

‘হাছনতরী’ বোটের ব্যবস্থাপক রাহাত আহমদ বলেন, বোটে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা ট্রিপ হলে ভাতা পান। ট্রিপ না হলে পান না। তাই মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ঘাটে  ‘অভিযাত্রী’ নামের চারটি হাউসবোট বাঁধা ছিল। এর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এক সপ্তাহে তিনটি ট্রিপ ছিল। সব বাতিল করতে হয়েছে। শুক্র ও শনিবারও ট্রিপ আছে। কিন্তু পর্যটক না এলে তো বসে থাকতে হবে। আমাদের চার নৌকায় অন্তত ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হলো।’

শহরের ওয়েজখালী ঘাটে বাঁধা ছিল ‘নীলাঞ্জনা’ নামের একটি বোট। এর মালিক সজীব আহমেদ বলেন, ‘বন্যার পর গত এক সপ্তাহ সব বন্ধ ছিল। এবার মৌসুমের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেলাম আমরা। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা বাঁচি।’

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক বহনকারী হাউসবোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট-বড় দুই থেকে তিন শ নৌকা আছে। এর মধ্যে শতাধিক আছে হাউসবোট। একেকটি হাউসবোট তৈরিতে ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে এসব হাউসবোট পর্যটক নিয়ে হাওরে যেতে পারেনি। পর্যটকেরা সুনামগঞ্জে আসতে পারেননি। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁর আশা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার পর্যটকে মুখর হবে হাওর। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা।