এইচএসসি পরীক্ষার দুই দিন আগে শিক্ষার্থী নিখোঁজ

এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিরব হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

‘আমি স্যারের কাছে আছি। সাজেশন নিতে এসেছি। খুবই পেরেশানির মধ্যে আছি।’ বাবা সাইদুর রহমানকে গতকাল শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিরব হোসেন (১৯)। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নিজের মুঠোফোন থেকে বাবার মুঠোফোনে কল করেছিলেন নিরব। এরপরই নিরবের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় তাঁর অংশ নেওয়ার কথা।

নিরব চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কেডিকে (খয়েরহুদা, দেহাটী, কাশিপুর) ইউনিয়নের দেহাটী গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা তাঁর। শুক্রবার রাতে চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতাল পাড়ার একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার নাম করে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

নিরবের নিখোঁজের খবর শোনার পর মা বিলকিস খাতুনের কান্না থামছে না। বাবা সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুই সন্তানের মধ্যে নিরব বড়। ২০২২ সালে জীবননগর উপজেলার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ–৫ পান। সংসারে অভাব থাকলেও ছেলের আগ্রহের কারণে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ভর্তি করেন। সেখান থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। ছোট ছেলে সোহরাব হোসেন দেহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তিনি আরও বলেন, ছেলে পড়াশোনায় খুবই ভালো। তাঁর প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা। তাই ঢাকার একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার জন্য শুক্রবার ১০ হাজার টাকাও নেয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে ফোন দিলে সে বলে যে আমি স্যারের কাছে আছি। সাজেশন নিতে এসেছি। খুবই পেরেশানির মধ্যে আছি।

সাইদুর আরও বলেন, ‘ফোন বন্ধ থাকায় ছেলের সাতে শুক্কুরবার রাতি আর কতা বুলতি পারিনি। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকি ফোন দিলি রিং বাজে। তবে কেউ তখন ফোন ধরিনি। ইরপর থেকে ছেলের ফোন নম্বরটি আর খোলা পাওয়া যায়নি। আত্মীয়দের বাড়িতি খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি।’

নিরব নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর মামা চুয়াডাঙ্গা কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক ইসরাইল হোসেন আজ শনিবার সকালে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। নিরব ও তাঁর মামা একই ছাত্রাবাসে থাকতেন। ইসরাইল প্রথম আলোকে জানান, চুয়াডাঙ্গা কলেজে ভর্তির পর মামা-ভাগনে একই ছাত্রাবাসে থাকতেন। দুই দিন আগে ইসরাইল তাঁর শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভৈরবায় গিয়েছিলেন। আজ সেখান থেকে ফিরে ভাগনে নিখোঁজের বিষয়টি জানতে পারেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ সেকেন্দার আলী প্রথম আলোকে জানান, এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিরব হোসেনের নিখোঁজের ঘটনায় সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। নিখোঁজ ছাত্রের ছবিসহ আশপাশের থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাঁর খোঁজে অভিযান চলছে।