শামা ওবায়েদকে ‘খুনের নির্দেশদাতা’ বললেন শহিদুল, শামা বললেন ‘নির্জলা মিথ্যাচার’
ফরিদপুরের নগরকান্দায় প্রতিপক্ষের হামলায় এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনার ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদকে দায়ী করেছেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) শহীদুল ইসলাম। যদিও শামা ওবায়েদ এই অভিযোগকে ‘নির্জলা মিথ্যাচার’ বলে দাবি করেছেন।
নগরকান্দা উপজেলায় আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুলের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় কবির ভুইয়া (৫০) নামে শহীদুলের এক সমর্থক নিহত হন। এ সময় অন্তত তিনটি দোকান লুটপাট করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শামা ওবায়েদের সমর্থকেরা এ হামলা চালান বলে অভিযোগ শহীদুলের সমর্থকদের।
এ ঘটনার পর শামা ওবায়েদ ও শহীদুল ইসলামের দলীয় পদ স্থগিত করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে দুই নেতাকে পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে দুজনের বিরুদ্ধে দলে বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ঘটনার বিষয়ে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শহীদুল ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি আজ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলি, এই খুনের নির্দেশদাতা শামা ওবায়েদ ইসলাম। স্পষ্টভাবে আমি এ কথা বলছি। তিনিই খুনের মদদদাতা, নির্দেশদাতা। আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে দেশের মানুষকে বলছি, আমি আমার পার্টিকে বলব। অতি দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমাদের দল সংকট মুক্ত হবে না।’
শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী প্রেক্ষাপটে অনেক নেতা নিজ নিজ এলাকায় এসেছেন। আমি আজকে আমি রওনা দিয়েছি। আমার বন্ধুবান্ধব সহকর্মীরা আনন্দে–উৎসবে আমাকে নেওয়ার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু পথে পথে এমন ব্যারিকেড, বাধা, দেশি অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী নিজে গতকাল বাড়ি এসে বসে এগুলো সব অর্গানাইজ করেছেন। ‘‘তাকে (শহীদুল) আসতে দেওয়া যাবে না, কোনোভাবেই আসতে দেওয়া যাবে না। খুন হইলে হবে, ১০টা হবে ২০টা হবে’’ এ রকম নির্দেশের কথা আমি শুনেছি এবং তার প্রমাণ আজ আমরা দেখলাম।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বুঝি না এটা কোন ধরনের রাজনীতি। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে হটিয়েছি এক খুনিকে হটিয়েছি এখন আবার নতুন করে আবার এ ধরনের রাজনীতি শুরু করলে আমি জানি না তার পরিণাম কী হবে।’
তোরণ নির্মাণ করে আনন্দ করার অভিযোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অতি উৎসাহী নেতা–কর্মীরা এ কাজ করেছে। আমরা অস্বীকার করিনি যে তোরণ বানানো হয়নি; কিন্তু আমরা এসব সমর্থন করছি না; কিন্তু তার জন্য নিজ দলের লোকদের ওপর হামলা করতে হবে ন্যক্কারজনকভাবে? ভালো না লাগলে এভাবে হামলা করে মানুষ মেরে ফেলতে হবে?’ সম্প্রতি শামা ওবায়েদও মোটর শোভাযাত্রা করেছেন বলে মন্তব্য করেন শহীদুল ইসলাম।
শহীদুল ইসলামের বক্তব্যকে ‘নির্জলা মিথ্যাচার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে শামা ওবায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি কি বললেন না বললেন তাতে কিছু আসে যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমি তো বাড়িতেই যাইনি তাই ‘‘আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী নিজে গতকাল বাড়ি এসে বসে এগুলো সব অর্গানাইজ করেছেন’’ এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই।’
হামলার ঘটনায় একজনের মৃত্যুতে দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। এখন হাসপাতালের শয্যায় অসংখ্য আহত অসংখ্য ভাই কাতরাচ্ছে। প্রতিদিন মারাও যাচ্ছে। এ অবস্থায় তোরণ বানিয়ে উৎসব করা আমাদের সাজে না। এ বিষয়টিই হয়তো এলাকার মানুষ মেনে নিতে পারেনি। এ কারণেই হয়তো এ ঘটনা ঘটেছে।’