সিলেটে মিথ্যা অভিযোগে মানব পাচারের মামলা দায়ের, সংবাদ সম্মেলনে দাবি
মানব পাচারের মিথ্যা অভিযোগে সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন এক আসামির স্বজন। গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে নগরের বারুতখানা এলাকার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
স্পেনে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে সুনামগঞ্জের এক যুবককে লিবিয়ায় পাচারের অভিযোগে ৪ ডিসেম্বর সিলেট কোতোয়ালি থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলার বাদী সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের আবদুল হক (৫৫)। এ বিষয়ে ৫ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘স্পেনের কথা বলে যুবককে লিবিয়ায় পাচারের অভিযোগ, ১২ জনের নামে মামলা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামি করা হয় সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা ফয়সল মিয়াকে (৪৫)। মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন ফয়সলের ভাই মকবুল মিয়া, জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের হাছান নূর, সাইফুল ইসলাম, আসামপুর গ্রামের এনাম, সিলেট নগরের তপোবন এলাকার নজরুল ইসলাম, দিরাই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সালেহ, জগন্নাথপুরের পাড়ারগাঁও গ্রামের শাহীন ও শ্রীধরপাশা গ্রামের জিলু মিয়া।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের ইকবাল হোসেন। তিনি মামলার প্রধান আসামি ফয়সল মিয়ার ভাতিজা। ইকবাল বক্তব্যে দাবি করেন, মামলার বাদী মিথ্যা অভিযোগে মানব পাচারের মামলা দায়েরের পাশাপাশি গণমাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। এতে মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে থাকা তাঁর পরিবারের সদস্যদের মানহানি ঘটেছে। এ কারণে তিনি ও তাঁর পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন হয়রানির মুখে পড়েছেন।
ইকবাল হোসেন লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, বাদী আবদুল হকের ছেলে আলী হোসেন ২০১৫ সাল থেকেই লিবিয়াপ্রবাসী। তাঁরা বাবা-ছেলে মিলেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠনোর নামে এলাকার অবস্থাসম্পন্ন ছেলেদের লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। তাঁদের নির্যাতনে ইতিমধ্যে লিবিয়ায় দুজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় আবদুল হক ও তাঁর স্ত্রী গ্রেপ্তারও হন। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই এবং পূর্বশত্রুতার জেরে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে আবদুল হক আদালতে নালিশি দরখাস্ত দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রীধরপাশা গ্রামের বশর মিয়া, আবুল খয়ের, এখলাছুর রহমান, নেহার আলম খান ও জিল্লুর রহমান জিলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ইকবাল হোসেন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে কাউকে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান।
গত ২৭ নভেম্বর সিলেটের মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ছেলে আলী হোসেনকে (২৮) পাচারের অভিযোগে একটি নালিশি দরখাস্ত করেছিলেন আবদুল হক। ৪ ডিসেম্বর কোতোয়ালি থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি নথিভুক্ত হয়।
সংবাদ সম্মেলনের পরে যোগাযোগ করলে মামলার বাদী আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পোলাডারে লিবিয়ায় জিম্মি কইরা রাখছে ফয়সলরা (মামলার প্রধান আসামি)। টেকা দিলে পোলাডারে ছাড়ব; সব মিলাইয়া প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিছি। পোলারে ফিরত দিব কইয়াও তারা পোলাডারে দেশে ফিরত পাঠাইছে না। আমার পোলার সঙ্গে সাড়ে তিন মাস কোনো কথাবার্তা নাই। কই আছে পোলাডা, তা-ও জানি না। গাঁওয়ের সবে এইটা জানে। এখন সাংবাদিকরারে কে কিতা কইছে, কিতা কইতাম? আমি আমার পোলাডারে ফেরত চাই।’