বগুড়ায় ‘পুরোনো ক্ষোভ’ থেকেই ধর্ষণের পর হত্যার চেষ্টা, বলছেন কিশোরীর স্বজন

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম (২০) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আর কিশোরীর স্বজনদের অভিযোগ, ধর্ষণের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। পাঁচ বছর আগে লুকিয়ে ওই কিশোরীর গোসল করার দৃশ্য দেখছিলেন সাইফুল। তখন সাইফুলকে ধরে ফেলে ওই কিশোরী। সে ক্ষোভ থেকেই সাইফুল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনন্যা রায়ের আদালতে সাইফুল এ স্বীকারোক্তি দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ধর্ষণের শিকার অগ্নিদগ্ধ ওই কিশোরী। স্বজনেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার করে তার একটি হাত কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে সাইফুল ইসলাম বলেছেন, তিনি মৎস্য খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় পুকুরে মাছের খাবার দিয়ে ফিরছিলেন। এ সময় বৃষ্টির কারণে পথে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় মেয়েটিকে একা পেয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। ধর্ষণের এক পর্যায়ে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়ে। তখন নিজেকে বাঁচাতে মেয়েটিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন সাইফুল।

তবে মেয়েটির চাচা অভিযোগ করেন, সাইফুল ইসলাম তাঁর ভাতিজিকে অনেক আগে থেকে বিরক্ত করছেন। ২০১৮ সালের দিকে গোসলের সময় তাঁর ভাতিজিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন সাইফুল। কিন্তু তখন সাইফুলকে ধরে ফেলে তাঁর ভাতিজি। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে সালিস ডাকেন। সালিসে সাইফুল নিজের দোষ স্বীকার করে পা ধরে মাফ চান। ওই ঘটনার পর থেকে সাইফুল তাঁর ভাতিজির ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি আরও বলেন, মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলেও তাঁকে সহায়তাকারী নাঈম প্রামাণিক (২২) ও নুরুন্নবীকে (৪০) গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রউফ বলেন, মামলার প্রধান আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য দুই আসামি গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার কিশোরী স্থানীয় একটি মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্রী। শুক্রবার ওই কিশোরীর মা-বাবা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় সে বাড়িতে একা ছিল। দুপুরে ওই তরুণ বাড়িতে ঢুকে বারান্দায় মুখ চেপে ধরে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই তরুণ কিশোরীকে মৃত ভেবে ঘরের বারান্দায় থাকা পাটের বস্তা ও কাপড় ভুক্তভোগীর শরীরে পেঁচিয়ে সয়াবিনের তেল ঢেলে আগুন দিয়ে দেন। এতে কিশোরীর দুই হাত, ডান গাল, গলার নিচে, ডান গাল, গলার নিচের অংশ, বাঁ পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়ে ঝলসে যায়।

আরও পড়ুন

আগুনের তাপে কিশোরী চেতনা ফিরে পেয়ে চিৎকার করে। তখন প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে প্রতিবেশীরা ওই কিশোরীর কথা শুনে ওই তরুণকে আটক করে থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে হেফাজতে নেয়। ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

ছাত্রীর বাবা রোববার মুঠোফোনে বলেন, ‘মেয়েটা দগ্ধ শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাবা হয়ে এই কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। একটা নরপশু মেয়েটার জীবনটা বীভৎসভাবে শুধু নষ্ট করেনি, নারকীয়ভাবে হত্যার চেষ্টা করেছে। পশুটার কঠিন শাস্তি চাই।’