রংপুরে শ্রমের হাট: ‘আইজ যে চাউল কিনমো, সেই টাকাও নাই’

কাজের আশায় অপেক্ষা করছেন দিনমজুরেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে রংপুর নগরের শিমুলবাগ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই কাজের সংকট। গ্রামের খেতে কাজ থাকে না। ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন রংপুর শহরে আসেন নয়া মিয়া। এক দিন কাজ জোটে তো দুই দিন বেকার থাকতে হয়। তবে কাজের আশায় ডালি–কোদাল নিয়ে প্রতিদিনই তিনি অপেক্ষায় থাকেন। দিনমজুরির কাজ করে কোনোরকমে সংসার চলে তাঁর।

নয়া মিয়ার বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ধামুর এলাকায়। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রংপুর নগরের ধাপ শিমুলবাগ এলাকায় শ্রমের হাটে আসেন তিনি। তাঁর মতো অনেকেই এখানে কাজের খোঁজে আসেন।

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার নয়া মিয়ার (৪৫)। আজ মঙ্গলবার সকালে নগরের ধাপ শিমুলবাগ এলাকায় কথা হয় নয়া মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই সময়টা গ্রামোত কাজকাম থাকে না। তাই শহরোত ছোটে মানুষ। প্রতিদিন কাম পাওয়া যায় না। বাসাবাড়ির বিল্ডিংয়ের কাজ আগের থাকি অনেক কম। হামারগুলার দামও (মজুরি) কমি গেইছে।’

দিনমজুর এনামুল হকের বাড়ি গঙ্গাচড়ার আদর্শপাড়ায়। দিনমজুরি করে তিনি সংসার চালান। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। এনামুলও প্রতিদিন ধাপ শিমুলবাগ শ্রমের হাটে আসেন কাজের সন্ধানে। তিনি বলেন, ‘গত সাত দিনে মাত্র দুই দিন কাজ জুটছে। এই দুই দিনের টাকা দিয়ে কোনোরকমে কষ্ট করিয়া চলছি। আইজ যে চাউল কিনমো, সেই টাকাও নাই।’

গঙ্গাচড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা তিস্তা নদীর ভাঙনের কবলে। ফসলি জমি ও বসতবাড়ি বিলীন হয়ে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ১০–১২ কিলেমিটার সাইকেল চালিয়ে তাঁরা রংপুর শহরে কাজের খোঁজে আসেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলার বোল্লারপাড় এলাকা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে কাজের সন্ধানে এসেছেন তৈয়ব আলী। তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) কাজ না পায়া ফিরি গেছি। জমানো তহবিলোত (টাকা) হাত দেওয়া লাগছে। এমন করিয়া যদি কাজ না জোটে, তাইলে হামারগুলার খুব কষ্ট হইবে।’

রংপুর নগরে ধাপ শিমুলবাগ ছাড়া আরও দুটি শ্রমের হাট রয়েছে—বেতপট্টি ও কেরানীপাড়া। আজ সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দিনমজুরেরা বসে আছেন কাজের সন্ধানে।

আগের মতো আইসামাত্র কাজ পাওয়া যায় না। বালু-ইট সরানোর কাজ চুক্তিভিত্তিক করলেও শহরোত বাসাবাড়ির কাজ কমি গেইছে। আগোত ৬০০ টাকা আয় হইলেও এলা ৪০০ টাকাতেও কাজ জোটে না।
শফিক মিয়া, দিনমজুর

কেরানীপাড়া চারমাথা মোড়ে দিনমজুরের ভিড়। ডালি নিয়ে বসে আছেন প্রায় ৩০ জন। তাঁদের একজন শফিক মিয়া বলেন, ‘আগের মতো আইসামাত্র কাজ পাওয়া যায় না। বালু-ইট সরানোর কাজ চুক্তিভিত্তিক করলেও শহরোত বাসাবাড়ির কাজ কমি গেইছে। আগোত ৬০০ টাকা আয় হইলেও এলা ৪০০ টাকাতেও কাজ জোটে না।’

শহরের বেতপট্টি এলাকায় আরেকটি শ্রমের হাটেও দিনমজুরদের কাজের অপেক্ষা করে বসে থাকতে দেখা যায়। সকাল আটটার দিকে এই শ্রমের হাটে ২৫ জনের বেশি দিনমজুর বসে আছেন। সুনীল কুমার নামের একজন বলেন, ‘গত দুই দিন আধা বেলা করিয়া কাম করছি। তাতে করে মজুরি একেবারে কম। সেই টাকাত শুধু চাউল কেনা গেইলেও তরকারি কেনার সাধ্য থাকে না।’