এক শিক্ষককে বরখাস্ত, ইনস্টিটিউট থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার মদদদাতার অভিযোগে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বসির আহমেদকে ডিন পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলমকে নতুন ডিনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট থেকে বঙ্গবন্ধু নাম বাদ দিয়ে শুধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট রাখা হয়েছে। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিষয়টি আজ সোমবার রাতে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব ও রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান।

ফরিদ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ-বহিরাগত সন্ত্রাসী ও পুলিশ হামলা করে। এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্য, প্রক্টরসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাসহ মোট ২১৪ জনকে আসামি করা হয়। অধ্যাপক ফরিদকে ৮ নম্বর আসামি করা হয়। ৪ অক্টোবর তাঁকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আটক করে পুলিশে দেন একদল শিক্ষার্থী। পরদিন সাজ্জাদুলের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

একই মামলার ৪ নম্বর আসামি করা হয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন বসির আহমেদকে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরেননি। তাঁকে ডিন পদ থেকে অব্যাহতির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে গতকাল সিন্ডিকেট সভায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ফরিদ আহমেদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার অন্যতম মদদদাতা ছিলেন ফরিদ। এসব অভিযোগে ১৮ আগস্ট ফরিদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তাঁর নিজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একটি চ্যাটবক্স ফাঁস হয়। চ্যাটবক্স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবুন্নেসার লেখা, ‘আমাদের এতগুলো শিক্ষক আহত হয়েছেন। আমরা না খেয়ে আছি। আমাদের খবর কাউকে নিতে দেখিনি।’ এই মেসেজের প্রত্যুত্তরে অধ্যাপক ফরিদ শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আরেকটু অপেক্ষা করুন। রাজাকারদের পরাজয় সমাসন্ন। আপনাদের কষ্টের বিনিময়ে দেশ আগামী দিনে শুদ্ধ ধারায় এগিয়ে যাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট থেকে বঙ্গবন্ধু নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে ৩০ সেপ্টেম্বর আন্দোলন করেন ওই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। পরে গতকাল সিন্ডিকেট থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দেওয়া হয়।

এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ওই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ইনস্টিটিউটের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বিভাগের নামের আগে ব্যক্তির নাম হতে পারে না। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনার নাম ব্যক্তির নামে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু চাটুকারের কারণে আমাদের ইনস্টিটিউটের নামের আগে ব্যক্তির নাম যুক্ত করা হয়েছিল। অবশেষে সেটি পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা সবাই খুশি।’