গ্রিন টিতে সম্ভাবনা কাপাসিয়ার
এখানকার গ্রিন টির বাগান দেখে সিলেট-মৌলভীবাজারের চা–বাগানের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
নদীর পাড় ঘেঁষেই সড়ক। যেতে যেতে পাশেই চোখে পড়ে কাঁটাতারে ঘেরা অচেনা গাছের বিশাল বাগান। বাগান দেখে সিলেট-মৌলভীবাজারের চা–বাগানের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। সমতল এলাকা বলে এটিকে চা–বাগান হিসেবে বিশ্বাস না–ও হতে পারে। তবে কোম্পানির বাংলো ও সাইনবোর্ড দেখলেই নিশ্চিত হওয়া যায়, এটি সমতলে সাড়া জাগানো চা–বাগান।
গাজীপুরের কাপাসিয়ার তরগাঁও ইউনিয়নের চিনাডুলি গ্রামে এই চা–বাগানের অবস্থান। পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ভিন্ন জায়গায় দুই হেক্টর জমিতে এই চা–বাগান তৈরি করা হয়। ওই গ্রামের লুৎফর রহমান নামের এক অধ্যাপক চা–বাগানটি শুরু করেন ২০১৯ সালে। চা চাষে কাপাসিয়ার মাটির উপযোগিতা পরীক্ষা করতে তিনি এই উদ্যোগ নেন।
বাগানের নাম দেন ‘কাপাসিয়া চা বাগান’। তাঁর চা–বাগান থেকে ইতিমধ্যে গ্রিন টি (সবুজ চা) উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে বাগান থেকে পাওয়া চা–পাতা দিয়ে ‘হ্যান্ডমেড’ গ্রিন টি উৎপাদন করছেন তিনি। এই গ্রিন টি তিনি তাঁর কর্মীদের দিয়ে প্যাকেট করে বিক্রি করছেন।
প্রথম অবস্থায় কোনো ব্র্যান্ডিং করেননি। তবে ব্যাপক উৎপাদনে যাওয়ার পর ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাত করার পরিকল্পনা আছে তাঁর। পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা সেই চা–বাগান এখন কাপাসিয়ার মানুষের কাছে উদাহরণ।
প্রায় ৩৫ বছর দেশে বিভিন্ন চা-বাগানে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন লুৎফর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ চতুর্থ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি চা–বাগানে চাকরি করেন। দেশের বৃহত্তম মালনীছড়া চা–বাগানে ছিলেন ১৫ বছর। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) অধ্যাপনা করছেন।
গ্রিন টি উৎপাদন সম্পর্কে লুৎফুর বলেন, গ্রিন টি বানানো হচ্ছে হাতের মাধ্যমে। প্রতি সপ্তাহে একবার করে ছয় দিন বয়সী পাতাগুলো উঠাই। পাতাগুলোকে এক দিন ‘ওয়েদারিং’ করা হয়। ফুটন্ত পানির মধ্যে পাতাগুলোকে দুই-তিন মিনিট রেখে সেখান থেকে উঠিয়ে ঠান্ডা করা হয়। তারপর হাতে মলে রোদে শুকিয়ে গ্রিন টি তৈরি করা হয়।
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বলেন, ‘আমি চিনাডুলি গ্রামের ওই চা–বাগানে গিয়েছিলাম। খুব ভালো উৎপাদন হচ্ছে। কাপাসিয়ার এই মাটির যে গঠন, এখানে চায়ের চাষ ভালোভাবেই সম্ভব। সম্ভাবনা প্রমাণ করেছেন তিনি।’