‘আশা ছিল ছেলে সংসারের হাল ধরবে, মুহূর্তেই সব শেষ’
‘ছেলেকে কষ্ট করে পড়িয়েছি। কখনো কষ্ট বুঝতে দিইনি। পড়ালেখা করাতে গিয়ে বিভিন্ন এনজিওতে প্রায় তিন লাখ টাকা দেনা হয়েছে। সব আশা-ভরসা ছিল এই ছেলেটা নিয়ে। আশা ছিল ছেলে উপার্জন করবে, সংসারের হাল ধরবে। সব আশা মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেল।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গত সোমবার চট্টগ্রামে জাহাজে বিস্ফোরণে নিহত ডেক ক্যাডেট সৌরভ সাহার বাবা মানিক সাহা। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে তেলবাহী জাহাজ ‘বাংলার জ্যোতিতে’ তিনি নিহত হন।
সৌরভ (২৫) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর এলাকার বাসিন্দা। বরিশাল মেরিন একাডেমি থেকে পড়ালেখা শেষ করে গত জুলাইয়ে এক বছরের ইন্টার্নি করতে তেলবাহী জাহাজে কাজ শুরু করেন। সেখানে দুর্ঘটনায় মারা যান।
আজ বুধবার তাঁর লাশ নিজ বাড়ি শৈলকুপার কবিরপুর এসে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সনাতনী রীতি মেনে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা তিনটায় কবিরপুর শ্মশানে তাঁকে দাহ করা হয়।
সৌরভের বাবা মানিক সাহা জানান, তাঁর দুই ছেলে। সৌরভ বড়, ছোট ছেলে শেখর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। হাট থেকে পাটসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে মহাজনের আড়তে বিক্রি করেন। এভাবে কোনোমতে সংসার চালান। মাঠে চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। আড়াই শতক জমির ওপর টিনশেডের বাড়িতে থাকেন। ছেলেটি ছিল তাঁর সব আশা-ভরসা।
মানিক সাহা প্রথম আলোকে বলেন, সৌরভ শৈলকুপা সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বরিশাল মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হয়। পরে ২০২৩ সালে মেরিন একাডেমির পড়ালেখা শেষ হয়। এরপর চলতি বছরের জুলাইয়ে ইন্টার্নি করতে বাংলার জ্যোতিতে যোগদান করে। সোমবার বেলা ১১টায় বিস্ফোরণে মারা যায়। সকালে ঘটনা ঘটলেও বেলা আড়াইটার দিকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সৌরভের মা সীমা রানী সাহা বলেন, ‘আমার বাবা জাহাজে খুব পরিশ্রম করত। ওর চেহারা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ছেলেকে মোবাইলে ভিডিও কল দিতে বললেও দিত না। ঘটনার দিনও বলেছিলাম, একটু ভিডিও কল দেও, একটু তোমাকে দেখি। কিন্তু ছেলেকে দেখে আমি কষ্ট পাব, তাই দেয়নি।’
দাদি মিনতী রানী সাহা বলেন, তাঁর নাতি সৌরভ বাড়ি থেকে জাহাজে যাওয়ার আগে অনেক গল্প বলেছিল। এবার বাড়ি এসে একটা ভালো চাকরি করবে। তার আগেই লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরল।