শতকোটি টাকা ব্যয়ের পরও নরসুন্দা এখন মরা খাল
কিশোরগঞ্জ শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। অথচ নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে এনে গতিপ্রবাহ ঠিক রাখতে শতকোটি টাকা ব্যয়ে পুনঃখনন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজও করা হয়। কিন্তু নদীটির অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং শহরের অংশে নরসুন্দা এখন ময়লার ভাগাড়। আর নদীর দুই পাশে দখলের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, দ্রুত নদী দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীতে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা।
কিশোরগঞ্জ শহরের বাসিন্দা লেখক ও শিক্ষক বদরুল হুদা বলেন, পুনঃখনন ও পুনর্বাসন প্রকল্পে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রশাসনের উচিত নদী ভরাটের উৎসব, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করাসহ নদীর কচুরিপানা সরিয়ে নদীতে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি শহরের ময়লা-আবর্জনা, পলিথিনসহ অন্য কোনো ময়লায় যাতে নদীটি দূষিত না হয়, সে বিষয়ে সোচ্চার থাকা।
রোববার সরেজমিনে নরসুন্দা নদীর পাড়ে দেখা যায়, শহরের বড় বাজার, কাচারি বাজারসহ কয়েকটি বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। এর দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ আশপাশের মানুষ। নদীপাড়ের হাঁটাপথ (ওয়াকওয়ে) বা পদচারী–সেতু দিয়ে চলাচলকারী মানুষকে নাক চেপে ধরতে দেখা গেছে। দুর্গন্ধে পেট ফুলে যাওয়ার মতো অবস্থা। তা ছাড়া বাজারের সব ধরনের ময়লার পলিথিন, পচা কাঁচামালসহ জবাই করা পশুর বর্জ্য নদীতে ফেলে স্তূপ করা হয়েছে। আশপাশে কাক, কুকুর ও গরু-ছাগল বিচরণ করছে। আবর্জনায় ভরে নরসুন্দা নদী এখন মরা সরু খালে পরিণত করা হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় খননের আগের চেয়ে এখনকার অবস্থা আরও বেশি খারাপ।
নদীবিষয়ক জার্নাল রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘নদী দিবস এলেই আমরা নদীর কথা মনে করি। নদীর অবস্থা জানতে চাই। অথচ হওয়া উচিত ছিল নিয়মিত নদীতে দৃষ্টি রাখা। তাহলে নদীর দখল-দূষণের পরিমাণ অনেক কমে যেত। জেলা শহরের প্রধান নদী নরসুন্দা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। দখল হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে, দেখার কেউ নেই। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা প্রবহমান স্বচ্ছ পানির নদী দেখতে চাই।’
এলজিইডি কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নরসুন্দা নদী রক্ষায় ২০১২ সালে নেওয়া হয় ১১০ কোটি টাকার প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থেকে নীলগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পুনঃখনন ও পুনর্বাসনের কাজ করা হয়। এত টাকা ব্যয় করা হলেও নদী নাব্যতা ফিরে পায়নি। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে কাজটি করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের টাকা নিয়েও লুটপাটের অভিযোগ আছে।
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব নদী দিবস। এ উপলক্ষে আজ কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা খানম প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
নরসুন্দা নদী বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম প্রথম আলোকে বলেন, নরসুন্দা নদীর পানিপ্রবাহ ও দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে পৌরসভার সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।