বাল্যবিবাহে বাধা দেওয়ার জেরে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের নারী কর্মকর্তাকে মারধর

বাল্যবিবাহে বাধা দেওয়ার জেরে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের জেন্ডার প্রমোটর ফাতিমা বেগমকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৮ জুন বিকেলে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সেলিনা বেগম (৩৮) ও তাঁর স্বামী মো. মহিউদ্দিনের (৪৫) বিরুদ্ধে দশমিনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ফাতিমা বেগম।

এ ঘটনায় করা জিডিতে বলা হয়েছে, ফাতিমা বেগম ও সেলিনা বেগমের বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। সেলিনা বেগম ও মো. মহিউদ্দিনের মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের আয়োজনের কথা জেনে ফাতিমা বেগম বাধা দেন। এতে তাঁদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জের ধরে মহিউদ্দিন ও সেলিনা বিভিন্ন সময়ে ফাতিমাকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ৮ জুন বিকেলে ফাতিমা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনের মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় মহিউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে ফাতিমাকে চড়থাপ্পড় ও কিল–ঘুষি মারেন । ফাতিমার ছেলে মো. আহনাফ হোসাইন (৮) মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে মহিউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী এ ঘটনায় মামলা করার হুমকি দিয়ে চলে যান। স্থানীয় লোকজন ফাতিমাকে উদ্ধার করে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সুস্থ হয়ে ১১ জুন দশমিনা থানায় জিডি করেন। সম্প্রতি এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ফাতিমা বেগমকে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মহিউদ্দিন বলেন, তাঁর স্ত্রী সেলিনা বেগম ‘পিচ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি সংস্থার সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছেন। এটি একটি শিক্ষাকেন্দ্র। সেখানে ফাতিমা শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তবে ফাতিমার বিরুদ্ধে সেলিনা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ করলে তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে ঘটনার দিন ফাতিমা বেগম সেলিনা বেগমের পথরোধ করে তাঁকে মারধর করেন। চিৎকার শুনে তিনি (মহিউদ্দিন) দৌড়ে এসে দুজনকে ছাড়িয়ে দেন। তিনি ফাতিমাকে মারধর করেছেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ছাড়া যে ভিডিও ছড়িয়েছে, সেখানে শুধু তাঁর অংশটুকু দেখানো হয়েছে।

মহিউদ্দিনের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফাতিমা বেগম বলেন, ‘আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম বলেন, ‘সেলিনা বেগম আমার পরিষদের উদ্যোক্তা হলেও সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করত তার স্বামী মো. মহিউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। সে যেভাবে একজন নারীকে প্রকাশ্যে মারধর করেছে, তার নিন্দা কীভাবে জানাব, তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ফাতিমা বেগম থানায় জিডি করেছেন। অভিযোগ তদন্তের অনুমতির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিজা নাজনীন বলেন, এ ঘটনার বিচার হওয়া উচিত। ফাতিমা বেগমকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।