ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজশাহী ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দমিছিল

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দমিছিল। গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনেছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় রংপুর ও রাজশাহীতে আনন্দমিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাতে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার খবর পাওয়ার পর বেগম রোকেয়া ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দমিছিল করা হয়।

গতকাল রাত ১২টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে আনন্দমিছিলটি শুরু হয়। শহীদ আবু সাঈদ চত্বর (পার্কের মোড়) থেকে শুরু হয়ে চকবাজার এলাকা ঘুরে আবার প্রধান ফটকের সামনে এসে মিছিলটি শেষ হয়। এতে কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান তুলে আনন্দ প্রকাশ করেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ তাঁরা জানান। কারণ, ছাত্রলীগ সারা বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা হত্যাকাণ্ড, গুম, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রাতে আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দমিছিলের পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে মিলিত হন। পরে মিছিলটি বিভিন্ন আবাসিক হল প্রদক্ষিণ শেষে সাড়ে ১১টায় একই স্থানে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

আনন্দমিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘হইহই রইরই, ছাত্রলীগ গেলি কই’, ‘গণহত্যার সঙ্গী, ছাত্রলীগ জঙ্গি’, ‘ছাত্রলীগ দেখে যা, ক্যাম্পাসে তোর বাপেরা’, ‘ছাত্রলীগের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ছাত্রলীগ ছাত্রলীগ, জঙ্গি জঙ্গি’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শুধু ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করলেই হবে না, ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের মতো কোনো ফ্যাসিবাদী সংগঠন যেন গড়ে না উঠতে পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

একাত্তর–পরবর্তী সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড একদিকে আর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড অন্যদিকে রাখলে দেখা যাবে, তারা কয়েক গুণ বেশি অপরাধ করেছে। ফ্যাসিবাদের অন্যতম হাতিয়ার ছিল ছাত্রলীগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার পৃষ্ঠপোষক ও মানবাধিকার কর্মী রাশেদ রাজন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ছাত্রলীগের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। গত ১৫ বছরে তারা যেসব অপকর্ম করেছে, সেগুলো উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন পাস হয়েছে। বাকি চার দফা দাবিও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার পৃষ্ঠপোষক ও মানবাধিকারকর্মী রাশেদ রাজন বলেন, একাত্তর–পরবর্তী সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড একদিকে আর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড অন্যদিকে রাখলে দেখা যাবে, তারা কয়েক গুণ বেশি অপরাধ করেছে। ফ্যাসিবাদের অন্যতম হাতিয়ার ছিল ছাত্রলীগ। গণভবন থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি ইঞ্চি মাটি দখল করে তারা অপরাধ কার্যক্রম চালিয়েছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি দেশের গণমানুষের দাবি ছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লায় মিষ্টি বিতরণ

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককেন্দ্র থেকে মিছিল শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবন, বটতলা এলাকা হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনের চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও মিষ্টি বিতরণ করেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের শাবাব বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, যে ছাত্র সংগঠন জুলাই বিপ্লবের সময় আমাদের ভাইবোনদের হত্যা করেছে, তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ফ্যাসিস্টের দোসর ছাত্রলীগ যেন কোনোভাবেই ফিরে আসতে না পারে। তারা যেন প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সবাই সচেষ্ট থাকব।’

গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল রাত ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় কয়েকজন সমন্বয়কের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এটি নগরের কান্দিরপাড় এলাকার সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে টাউন হলের সামনে এসে মিষ্টি বিতরণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাবিক হোসাইন, সমন্বয়ক আরাফ ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমন্বয়ক ইস্পাত মোল্লা প্রমুখ।

সাবিক হোসাইন বলেন, ‘গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনটি মানুষের ওপর এতো বেশি অত্যাচার করছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের খবরে কুমিল্লাসহ সারা দেশের মানুষ খুশি, আনন্দিত। কুমিল্লার সাধারণ মানুষ এই আনন্দের সময় আমাদের কাছে মিষ্টি প্রত্যাশা করেছে। তাই নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ব্যবসায়ী, পথচারী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে মিষ্টিমুখ করিয়েছি। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর; প্রতিনিধি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংবাদদাতা, কুমিল্লা)