চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনের আর বাধা নেই। আগামী সপ্তাহে যেকোনো দিন তিনি শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এর আগে মেয়রদের অপসারণ করা প্রজ্ঞাপনও আজ বৃহস্পতিবার সংশোধন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
১ অক্টোবর বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন আদালত। আদালত রায় ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। রায় ঘোষণার সাত দিন পরেই শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনের শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগও প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আগামী সপ্তাহে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ৯ জনকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীও। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেন শপথ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
অবশ্য আজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৯ আগস্ট মেয়রদের অপসারণের প্রজ্ঞাপনের সংশোধন করে একটি সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে ৩ নম্বর ক্রমিক বিলুপ্ত করা হয়েছে। ৩ নম্বরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪–এর ১৩ (ক) প্রয়োগ করে বাংলাদেশের সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এখন ওই প্রজ্ঞাপনের ক্রমিক নম্বর ৩ বিলুপ্ত করে সংশোধন করা হলো।
এর আগে ৮ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে ইসি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি শিরোনামে বলা হয়েছে, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ, ১ম আদালত, চট্টগ্রাম এ দায়েরকৃত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলার গত ১ অক্টোবরের আদেশে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী ১ নম্বর বিবাদী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ভোটের দিন হামলা, গোলাগুলি, প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এতে ভোটের উৎসব অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। ভোট শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কোনো ভোটই হয়নি।