কারফিউ শিথিল হলেও নেই বেচাকেনা, শিপনদের এখন বড়ই দুঃসময়

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে ক্রেতাদের অপেক্ষায় শিপন চন্দ্রছবি: প্রথম আলো।

শিপন চন্দ্র হাওলাদারের (৪২) বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব সুবিদখালী গ্রামে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে তিনি চটপটি বিক্রি করেন। সেই উপার্জনেই চলে তাঁর পাঁচ সদস্যের সংসারের যাবতীয় খরচ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহের সংঘাতপূর্ণ সময়ে তিনি চটপটি নিয়ে বের হতে পারেননি। উপার্জনহীন এই দিনগুলোতে স্থানীয় মুদিদোকান থেকে বাকিতে চাল, আলু আর ডাল কিনে কোনো রকমে সপ্তাহ পার করেছেন। কারফিউ শিথিল হওয়ায় আবার চটপটি নিয়ে ফুটপাতে ফিরেছেন শিপন। কিন্তু আগের মতো ক্রেতাদের আনাগোনা নেই আর।

শিপন চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতা না থাকায় দিন শেষে তাঁর খরচের টাকাই ওঠে না। এমন পরিস্থিতিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কীভাবে সংসারের খরচ চলবে, কী দিয়ে দোকানের দেনা পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে কথা হয় শিপনের সঙ্গে। চটপটি নিয়ে ক্রেতাদের আগমনের আশায় বসে ছিলেন তিনি। শিপন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ কীভাবে পার করেছি, একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। পাশের দোকান থেকে বাকিতে চাল, ডাল ও আলু নিয়েছিলাম। কোনো মাছ–তরকারি কিনতে পারিনি। সেখানে ১৫ শ টাকা বাকি পড়েছে। কারফিউ শিথিল হওয়ায় দুই দিন যাবৎ চটপটি নিয়ে আবার বসেছি, কিন্তু বেচাকেনা নেই বললেই চলে। যা কিছু হয়, তা দিয়ে খরচাই ওঠে না।’

শিপন বলেন, ‘বাবার কোনো জমি নেই। এমনকি ঘরও নেই। চাচার বাড়িতে তাঁদের একই ঘরে দুই ছেলে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কোনো রকমে বসবাস করছি। চাচাদের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। তাঁরাও দিন এনে দিন খান। চাচার জরাজীর্ণ টিনের ঘরে চাচাতো ভাইদের পরিবারসহ মোট চারটি পরিবার ঠাসাঠাসি করে বসবাস করি।’

শিপন চন্দ্রের বড় ছেলে কাকন এবার এসএসসি শেষ করে স্থানীয় সুবিদখালী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ছোট ছেলে ঋত্বিক চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। এক বেলা চটপটি বিক্রি করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ, সংসার চালানো এবং বৃদ্ধ মায়ের ওষুধের টাকা জোগাড়—সবই করতে হয়।

শিপন বলেন, কারফিউ শিথিল হলেও বাসা থেকে মানুষজন বের হচ্ছে কম। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না থাকায় শিক্ষার্থীরাও বের হচ্ছে না। বেচাকেনা হয় না বললেই চলে। তিনি বলেন, ‘যতটুকু খাবার (চটপটি) তৈরি করে নিয়ে আসছি, বিক্রি না হওয়ায় আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’

চটপটি বিক্রেতা শিপনের মতো চলমান পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন শত শত খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ এবং স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। শিপনের চটপটির দোকান থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই মুজিবুর রহমানের চায়ের দোকান। তিনি সাংবাদিক দেখেই বললেন, কবে স্বাভাবিক হবে দেশের অবস্থা? কবে আগের মতো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে? আর পারছেন না। কয় দিন খেয়ে না খেয়ে বাড়িতে ছিলেন। এখন কয়েক ঘণ্টার জন্য চায়ের দোকান খোলার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু ক্রেতা নেই। এভাবে আর কত দিন চলবে, প্রশ্ন তাঁর।