নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে রাতে মর্টার শেলের শব্দ, দিনে শান্ত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের অপর পাড়ে গোলাগুলি শুরু হলে ধানখেত ছেড়ে পালাতে থাকে এক শিশু
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপার থেকে গতকাল সোমবার রাতে থেমে থেমে মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। তবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কোনো শব্দ শোনা যায়নি, পরিস্থিতি শান্ত।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র লড়াই চলছে। ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে আরাকান আর্মির স্থাপনা ধ্বংস করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মর্টার শেল নিক্ষেপ করছেন। তবে গত পাঁচ দিন আকাশে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর জেট ফাইটার বা হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি দেখা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, গতকাল রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে জেট ফাইটার থেকে অন্তত ১৫টি বোমা ও মর্টার শেল ছোড়া হয়েছে ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ের আরাকান আর্মির বিভিন্ন আস্তানায়। এরপর আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের পেছনে মিয়ানমারের পাহাড়ে বিজিপি চৌকিতে সশস্ত্র পাহারা দেখা গেছে।
শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই চলছে। মাঝেমধ্যে জেট ফাইটার ও হেলিকপ্টার থেকে (সকাল থেকে বেলা তিনটার মধ্যে) বোমা, মর্টার শেল ছোড়া হতো। কিন্তু এই প্রথম গতকাল রাতে জেট ফাইটার থেকে মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটল। দুটি মর্টার শেলের গোলা এসে পড়েছে আশ্রয়শিবিরের পেছনে মিয়ানমার পাহাড়ে। পাহাড় থেকে ১০০ থেকে ১৩০ গজ উত্তরে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল থেকেই গোলাগুলি বন্ধ রেখেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এর একটি কারণ হতে পারে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের নেতৃত্বে ইন্দো–প্যাসিফিক আর্মিজ ম্যানেজমেন্টের ৪৬তম সেমিনারে অংশ নিতে আসা ২৪টি দেশের সেনা কর্মকর্তারা উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন কর্মসূচি। আজ বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর দলটি উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবির (ক্যাম্প-৪) পরিদর্শনে গেছেন সড়কপথে। সেখানে পাঁচ বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকা সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার জীবন মান, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইন্দো–প্যাসিফিক আর্মিজ ম্যানেজমেন্ট সেমিনারে অংশ নিতে আসা সেনা কর্মকর্তাদের ব্রিফ করেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা। সেনা কর্মকর্তাদের দলটির সঙ্গে একাধিক রোহিঙ্গা দলের বৈঠকের কথা রয়েছে। ক্যাম্পের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সড়কপথে উখিয়ার পাঁচ তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপ বিচ রিসোর্টে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা ও ঘুমধুম ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টু প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে সীমান্তে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেও মিয়ানমারে গোলাগুলি হচ্ছে। গুলির বিকট শব্দ এপারে আসছে। আতঙ্কে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না এলাকার মানুষ।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসের বেশি সময় চলে রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এতে এপারের মানুষ আতঙ্কে আছে। মিয়ানমারের কেউ যেন বাংলাদেশ ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা আছে।