ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, হুমকিতে বসতবাড়ি

ঝিনাই নদের ভাঙন দেখাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। গত শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের পশ্চিম পাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই ও ঝিনাই (স্থানীয় লোকজনের ভাষায় বউমরা) নদের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের আশঙ্কায় নদের তীরবর্তী অর্ধশত পরিবার বসতঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে উজান থেকে নেমে আসা ঢল, জোয়ারের পানি ও বৃষ্টির কারণে ওই দুটি নদের পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ঝিনাই নদের তীরবর্তী ফতেপুর ইউনিয়নের পারদিঘী, সুতানরি, ফতেপুর বাজার, বাদ্যকরপাড়া, থলপাড়া, বানকাটা, হিলড়া বাজার; চাকলেশ্বর ও বংশাই নদের তীরবর্তী ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল; লতিফপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহন, ফিরিঙ্গিপাড়া ও পৌর এলাকার বাওয়ার কুমারজানী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। ওই এলাকার ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, মসজিদ ও কবরস্থান ভাঙনের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে সেখানকার অন্তত ১৫ একর ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি নদে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে হিলড়া বাজার, বানকাটা মসজিদ ও থলপাড়া কবরস্থানসহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি।

মির্জাপুর উপজেলা সদর কিংবা আশপাশে যোগাযোগের জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কুর্ণী থেকে ফতেপুর পর্যন্ত পাকা সড়ক ছিল। কয়েক বছর ধরে ওই সড়ক ভাঙনের কবলে। ফতেপুর বাদ্যকরপাড়া ও হিলড়া এলাকায় সড়ক নদে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমেও সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে হিলড়া-আদাবাড়ি এলাকা দিয়ে ফতেপুর বাজারে আসছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে সড়কের ভাঙা অংশ পার হচ্ছেন।

ফতেপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ক্ষীতিশ পালের স্ত্রী জগৎমায়া পাল নদের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আসছি (বিয়ের পর)। এই নদের ম্যালা দূরে বড় ঘর ছিল। সড়কের ম্যালা পরে নদী আছিল। আমাগো ভিতর বাড়িতে যে দোয়ার আছিল, সেইখানে ঘর কাইর‌্যা থাকতাছি। তাও কবে জানি নদীতে চইল্যা যায়। আমাগো সামনে নদীর ওই পারে কয়ডা বাড়ি আছে। তা-ও অহন যাইতাছে।’

ফতেপুর বাজার নদের ঘাটে ৩০ বছর ধরে নৌকা চালাচ্ছেন মাঝি বিজয় দাস। তিনি জানান, প্রতিবছরই নদের পাড় ভাঙে। এর পাশ বেড়ে যায়। এ বছরও ফতেপুর বাজারের সাত থেকে আটটি দোকান ও পূর্ব পাড়ে অন্তত ১৫টি বাড়ি ভেঙে গেছে।

বাদ্যকরপাড়ার চনিবালা বাদ্যকরের ছেলেরা শূকর পালেন। তাঁরা নদের তীরবর্তী স্থানে একটি খাঁচায় শূকরগুলো রেখেছেন। চনিবালা বলেন, ‘এই যে আমরা এইগুলা পাইলা কইড্যা ট্যাকা পাই। তা-ও জানি কবে গাঙে ভাইস্যা যায়।’

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাত হোসেন জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এ জন্য নদের ডুবোচর থেকে বালু সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়ে ব৵বস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মির্জাপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান।