নরসিংদী সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা গলির মুখে ট্রাকের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শী কর্মীদের। নিহত ব্যক্তির নাম মাহাবুবুল হাসান (৪০)। তিনি উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগীরথপুর এলাকার একটি টেক্সটাইল মিলের সামনে মাহাবুবুল হাসানকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সঙ্গে থাকা দুই কর্মী।
মাহাবুবুল হাসানের বাড়ি ভগীরথপুর এলাকায়। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন নিহত মাহাবুবুল হাসানের কর্মী সাঈদ হাসান (৩৮) ও ফরহাদ মিয়া (৩৭)। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য মেহেরপাড়ার বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার অমিতকে (প্রান্ত) দায়ী করছেন নিহত ব্যক্তির কর্মী-সমর্থকেরা।
নিহত মাহাবুবুল হাসানের সঙ্গে থাকা কর্মী রবিউল হাসান ও অপু মিয়া বলেন, গতকাল রাত ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত কর্মীদের নিয়ে মেহেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছিলেন মাহাবুবুল। পরে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে ৯ জন কর্মীর সঙ্গে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। ওই কার্যালয় থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। রাত পৌনে ১২টার দিকে ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান আজাহার অমিতের ব্যক্তিগত কার্যালয়সংলগ্ন ওবায়দুল্লাহ টেক্সটাইল মিলের সামনে যাওয়ার পরপরই হামলার ঘটনা ঘটে।
এই দুই কর্মীর ভাষ্য, টেক্সটাইল মিলটির বিপরীত পাশের গলির মুখে দাঁড়ানো ছিল বালুভর্তি ট্রাক। ট্রাকের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন হামলাকারীরা। ট্রাকটি অতিক্রম করার সময় তাঁরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। হামলাকারীদের একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাহাবুবুল হাসানের কান থেকে ঘাড় বরাবর কোপ দেন। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মাহাবুবুলকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁদের ছোঁড়া গুলিতে বিদ্ধ হন সাঈদ ও ফরহাদ নামের দুই কর্মী।
আহত অবস্থায় তিনজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহাবুবুল হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে গুলিবিদ্ধ সাঈদ ও ফরহাদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহমুদুল কবির বাসার বলেন, মাহাবুবুল হাসানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ধারালো অস্ত্রের কোপে তাঁর বাঁ পাশে কানের ওপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত প্রায় ৮ ইঞ্চি গভীর ক্ষত ছিল। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
রবিউল হাসান ও অপু মিয়ার দাবি, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার অমিতের লোকজন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর মধ্যে রাসেল, আতাউর, নয়ন, নুরু, সেন্টু ও অভি নামের ছয়জনকে চিনতে পারার দাবি করেছেন তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মেহেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার অমিতের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ হত্যার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। সাবেক চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধবদী থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
নরসিংদীতে গত দেড় মাসে তিনজন রাজনীতিবিদ খুন হলেন। গত ১৫ এপ্রিল সদর উপজেলার আমদিয়া ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রুবেল মিয়াকে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ২২ মে দুপুরে রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নে গণসংযোগের সময় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন সুমন মিয়া।