খুলনায় বাবাকে হত্যার অভিযোগে কিশোরী মেয়ের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা
খুলনায় বাবাকে হত্যার অভিযোগে তাঁর কিশোরী মেয়ের (১৬) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নগরের দৌলতপুর থানায় মামলাটি করেছেন নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ও ওই কিশোরীর মা। এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে ওই কিশোরী থানায় এসে জানায়, প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে, পরে বালিশচাপা দিয়ে সে তার বাবাকে হত্যা করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৪ জুলাই মারা যান নগরের দৌলতপুর এলাকার একজন ব্যবসায়ী। তিনি দেয়ানা উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল তাঁর ছোট মেয়ে দৌলতপুর থানায় আত্মসমর্পণ করে। চলতি বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল সে। গতকাল তাকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। আজ মামলা হওয়ার পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন ওই ব্যবসায়ী। ৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও মেজ মেয়েকে ঘুমের ওষুধমিশ্রিত পানীয় পান করায় ছোট মেয়ে। ওই ব্যবসায়ীও মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে ছোট মেয়ে একা একা ভয় লাগছে জানিয়ে মাকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাতটার দিকে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী তাঁর স্বামীকে ডেকে কোনো সাড়া পান না। পরে তাঁর ডাক–চিৎকারে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা চলে আসেন। ওই সময় তাঁরা মরদেহের বাঁ হাতের বাহুর ওপরের অংশে পাশাপাশি দুটি ছোট ছিদ্র এবং বাঁ হাতের আঙুলে রক্ত দেখতে পান। এই সময় উপস্থিত সবাই ধারণা করেছিলেন যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। আবার অনেকেই বলেছিলেন, সাপের দংশনে মারা গেছেন তিনি। এরপর তাঁর দাফন সম্পন্ন করেন স্বজনেরা।
গতকাল ওই কিশোরীকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। আজ মামলা হওয়ার পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এজাহারে বাদী জানিয়েছেন, তাঁর ছোট মেয়ে তাঁদের বলেছে, শাসন করার কারণে রাগের বসে সে তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। আর এই কাজ যাতে নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে জন্য মা ও বোনকে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানীয় পান করায় সে। স্বামীর মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আইনানুগভাবে স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের আরজি জানিয়েছেন বাদী।
খুলনার দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আজ ওই কিশোরীর মায়ের করা মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। লাশ উত্তোলন মামলার কার্যক্রমের অংশের মধ্যেই পড়ে। সবকিছুই আইনানুগভাবে করা হবে।
কেএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) সোনালী সেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেলে ওই কিশোরীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু সে কিশোরী, সে জন্য আদালত তাকে যেখানে রাখতে বলবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।