চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যায় সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি পরিকল্পনাকারীদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। আজ বুধবার আদালত প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দ্রুত তদন্ত শেষ করে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবিও জানানো হয়।
মানববন্ধনে আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সাইফুল ইসলামের হত্যার সঙ্গে যাঁরা সরাসরি, পরোক্ষভাবে ও পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন, তাঁদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আজ নতুন বছরের প্রথম দিন। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মতো বাংলাদেশেও নববর্ষ উদ্যাপন করা হচ্ছে। কিন্তু আজ পয়লা জানুয়ারি চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি শোকাহত হয়ে এদিন উদ্যাপন করছি। কারণ, এই ইসকনের সন্ত্রাসীরা যে নারকীয় কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, দীর্ঘ ১৩১ বছরে এই আদালত প্রাঙ্গণে এমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যাঁরা জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট এবং একটাই। যে বা যাঁরা আমাদের ভাইকে হত্যা করেছেন, সেই হত্যাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত তদন্ত শেষে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই স্পষ্ট দাবি নিয়ে আজ আমরা এখানে মানববন্ধন করছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন থেকে সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, ইসকনের সন্ত্রাসীরা আমাদের ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের শাস্তি চাই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই বলে এটাকে আমাদের দুর্বলতা ভাববেন না।’
মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন আরও বলেন, ‘এখনো যাঁরা গ্রেপ্তার হননি, তাঁদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার ও তদন্ত শেষ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের ৭০ হাজার আইনজীবীর দাবি এটি। একজন আইনজীবী হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া এটা নজিরবিহীন, তাই আমাদের দাবি একটাই।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুল কাদের, সহসভাপতি মো. মাহফুজুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম কামাল, অর্থ সম্পাদক কাজী মো. আশরাফুল হক আনসারি, পাঠাগার সম্পাদক আহমেদ কবির, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারুফ মো. মাজেবুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক হাবিবুর রহমান, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অভিজিৎ ঘোষ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুস সাত্তার, ইফতেখার মহসিন প্রমুখ।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ১০ আসামির মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন মারধর করেন।