কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে বরিশালের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএম কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে যান শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এতে সারা দেশের সঙ্গে বরিশালের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করে প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর কোটা বাদে বৈষম্যমূলক সব কোটা বাতিলের দাবি জানান।
সমাবেশে বিএম কলেজের শিক্ষার্থী হুজাইফা রহমান, এস এম হাসান, হান্নান উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, যত ভয়ভীতি ও চাপ দেওয়া হোক না কেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কলেজে ফিরবেন না। তাঁরা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
কলেজশিক্ষার্থী হুজাইফা রহমান বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশকে মুক্ত করা হলেও আজও কোটাপদ্ধতি পাকিস্তানি শোষণ–বৈষম্য বহন করছে। অতিসত্তর আমরা এ পদ্ধতি থেকে মুক্তি চাই। আমাদের দাবি হলো, মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা। আমরা শিক্ষার্থীরা আগের মতো ক্লাসে ফিরে যেতে চাই। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে আমাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।’
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধে অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। বেলা দুইটায় তিন ঘণ্টা অবরোধের পর মহাসড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
বেলা দুইটায় বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে বেলা তিনটার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করলে আবার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বরিশাল থেকে দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দুই প্রান্তে অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যান আটকা পড়ে।
বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একাডেমিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই, বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতির বিলোপ। একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের বৈষম্য থাকতে পারে না। এ জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। অযৌক্তিক কোটাপদ্ধতির কারণে প্রতিবছর হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী দেশ ছাড়ছেন। এতে দেশ মেধাশূন্য হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই কোটাপদ্ধতির সংস্কার চাই।’
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নিবেদিকা দাস বলেন, ‘কোটাপদ্ধতির কারণে দেশে কর্মসংস্থান না হওয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। এ জন্য আমরা দ্রুত এই পদ্ধতির সংস্কার চাই। এটা দেশের সব শিক্ষার্থীর দাবি।’
এদিকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করায় সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। বাসযাত্রী আবির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। এর প্রতি আমাদেরও সমর্থন আছে; কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মহাসড়কে আটকে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর একটা সমাধান দরকার।’ সন্ধ্যা সাতটার দিকে মশালমিছিল শেষে অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।