প্রথম নির্বাচনেই জয়ী ‘ফুলতলী হুজুরের’ ছেলে

মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী। ‘সরকার ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ইসলামি এই চিন্তাবিদ ও আলেম এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ।

গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুছামুদ্দীন চৌধুরী পেয়েছেন ৪৭ হাজার ১৫৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাসুক উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯৭৩ ভোট। এ আসনে মোট ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নৌকার প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও হুছামুদ্দীনকে জিতিয়ে আনতে সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের তৎপরতা ছিল। এমনকি তাঁর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও নামেন। ছাত্রলীগ একাধিকবার হুছামুদ্দীনের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশও করে। অনেকে দলের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে অনিচ্ছাকৃতভাবেও হুছামুদ্দীনের পক্ষে প্রচারে নামেন। বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পীড়া দিলেও দলের উচ্চপর্যায়ের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে সবাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

সিলেট-৫ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন সাতজন। হুছামুদ্দীন ও মাসুক উদ্দিনের বাইরে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহমদ আল কবির ২০ হাজার ২৩০ ভোট, জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ ১২৪ ভোট, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার ২ হাজার ২০৭ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের বদরুল আলম ১৫৯ ভোট এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মো. খায়রুল ইসলাম ২১৪ ভোট পেয়েছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে হুছামুদ্দীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখানে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয়ভাবে সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মাসুক উদ্দিন আহমদকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পরে হুছামুদ্দীন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।

হুছামুদ্দীন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী সারা দেশে ‘ফুলতলী হুজুর’ হিসেবে পরিচিত। আবদুল লতিফের তৈরি করা সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহের অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ আছেন। ফুলতলী অনুসারীদের সিলেট-৫ আসনে একটা ‘ভোট ব্যাংক’ আছে। এ অবস্থায় প্রতিটি নির্বাচনের আগেই এসব ভোট কোন প্রার্থীর পক্ষে যাবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা আলোচনা থাকে।

তবে এবারের নির্বাচনে ফুলতলী হুজুরের ছেলে হুছামুদ্দীন নিজেই প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় তাঁকে ঘিরে আলোচনা হয়। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর গত ৫ ডিসেম্বর হুছামুদ্দীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ বৈঠকের পর থেকেই হুছামুদ্দীনের অনুসারীরা বিষয়টিকে ‘শুভ ইঙ্গিত’ বলে প্রচার শুরু করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে নিজ দলের প্রার্থীকে রেখে হুছামুদ্দীনের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় নামেন।

জয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে হুছামুদ্দীন চৌধুরীর মুঠোফোনে কল করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়, তাই তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, মাওলানা হুছামুদ্দীন স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। এর বাইরে আওয়ামী লীগের অনেকেই তাঁর সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায় ছিলেন। তাই আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও হুছামুদ্দীন সহজেই জয় পেয়েছেন।

যোগাযোগ করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। টুকটাক যা হয়েছে, তা প্রতিটি নির্বাচনেই কমবেশি হয়। এটা ধরার বিষয় নয়। সুন্দর একটি নির্বাচনে হুছামুদ্দীন জয় পেয়েছেন।