সিরাজদিখানে ইটভাটা দখল নিয়ে সংঘর্ষের পর এক পক্ষের মামলা, গ্রেপ্তার ২

মুন্সিগঞ্জ জেলার মানচিত্র

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় একটি ইটভাটা দখল করাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পরে নাসির মোল্লা পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়। মামলায় রাতেই দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে উপজেলার মোল্লাকান্দি ও বালুচর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বিবদমান পক্ষ দুটি হলো বালুচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নাসির মোল্লা এবং একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সদস্য নুরু বাউল। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নুরু বাউল পক্ষের আনোয়ার হোসেন (৪৫) ও আলী হোসেন (৫৫)।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় নাসির মোল্লা পক্ষের আওলাদ হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। গতকাল রাত ১২টার পর মামলাটি হয়। মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের কেউ এখনো কোনো অভিযোগ করেননি।

আরও পড়ুন

আধিপত্য বিস্তার এবং মোল্লাকান্দি এলাকার একটি ইটভাটা দখল করা নিয়ে উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের নাসির মোল্লা ও আলেক চান মুন্সি পক্ষের সঙ্গে একই ইউনিয়নের নুরু বাউল-শহীদ বাউল পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত কয়েক দিনে এ নিয়ে পক্ষ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। গত বুধবার রাতে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর জেরে গতকাল সকাল নয়টার দিকে মোল্লাকান্দি এলাকার নাসির মোল্লাদের ওপর টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান বাউল পক্ষের অনুসারীরা। এ সময় মোল্লা ও মুন্সি বংশের লোকজন একত্র হয়ে টেঁটা নিয়ে পাল্টা হামলা চালান। শুরু হয় টেঁটাযুদ্ধ। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই পক্ষের লোকজন একে অপরকে লক্ষ্য করে টেঁটা ও ইটের খোয়া নিক্ষেপ করেন। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে আছেন মোল্লাকান্দি ও বালুচর এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই।

রবিন মুন্সি নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার নানাবাড়ি মোল্লাবাড়িতে। আমি বিয়ে করেছি মোল্লা বংশের মেয়ে। আবার বালুচর বাজারে ব্যবসা করি। বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আমরা কখনো কারও পক্ষের হয়ে মারামারিতে যাইনি। এরপরও আমাদের সঙ্গে এমনটা হয়েছে। হামলা-মামলার ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না।’

বালুচর ও মোল্লাকান্দি এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সংঘর্ষের পর দুই গ্রামের মানুষ আতঙ্কে আছেন। সাধারণ মানুষ এলাকাছাড়া হয়েছেন। তবে পক্ষ দুটির যাঁরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাঁরা সক্রিয় আছেন। গোপনে গোপনে দল ভারী করছেন। যেকোনো সময় আবারও সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। পুলিশের উচিত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো।

বালুচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসির মোল্লা বলেন, ‘আমাদের আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনের অবস্থা খারাপ। আমরা আর অশান্তি চাই না। ঝগড়ার পর থেকে আমাদের লোকজন চুপচাপ আছে। তবে নুরু বাউলদের লোকজন গতকাল সকালে আমাদের মালিকানাধীন প্রতিটি ইটভাটায় যায়। সেখানে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে শ্রমিকদের শাসিয়ে এসেছে। তাদের ভয়ে শ্রমিকেরা কাজে যাচ্ছে না। আমরা এলাকায় শান্তির জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাই।’

এমন অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন নুরু বাউল। তিনিও সংঘর্ষ চান না​ বলে দাবি করেছেন। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো ইটভাটায় কাউকে হুমকি দিইনি। এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। আমরাও চাই আর যেন কারও কোনো ক্ষতি না হয়। তবে মোল্লাদের পক্ষের কাশেম মেম্বার ঝামেলা করার জন্য লোকজন জড়ো করছেন।’

বর্তমানে ওই এলাকা শান্ত আছে এবং পুলিশের নজরদারিতে আছে বলে জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এলাকায় আর কোনো ঝামেলা হবে না। কেউ যদি কোনো রকম অশান্তির চেষ্টা করেন, পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।