রাজশাহীতে টিসিবির কার্ড ‘বাতিল করতে’ বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের তৎপরতা
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতারা বাড়ি বাড়ি লোক পাঠিয়ে টিসিবির কার্ড নিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টিসিবির কার্ডধারীদের আগের তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা তৈরির জন্য এই নেতারা নানা তৎপরতাও শুরু করেছেন। সিটি করপেরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবির কার্ডধারী কয়েকজন নারী সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা শাখার কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে স্থানীয় জামায়াত নেতা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত বিএনপি নেতার দাবি, ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কার্ড দেওয়ার সময় দলীয়করণ করেছিলেন। এখন তালিকা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য তাঁরা সিটি করপোরেশনে আবেদন করেছেন।
রাজশাহী মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি কার্ডের সুবিধাভোগী ২ হাজার ৫৩৩ জন। এর মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন দাসপুকুর মহল্লার নিলুফা বেগম, দোলকজান বেওয়া, জোসনা বিবি, সালেহা বেগম, প্রতিবন্ধী মাসুমা আক্তার, সখিনা ইসলাম, সালেহা বিবি, নিমতলা মহল্লার রহিমা বেগম, ফাতেমা বেগম এবং ডিঙ্গাডোবার সাবিনা ইয়াসমিন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নভেম্বর মাসের টিসিবির পণ্য এখনো সুবিধাভোগীরা পাননি।
লিখিত বক্তব্যে রহিমা বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমরা প্রতি মাসে একবার সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চাল টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে পেয়ে আসছি। গত নভেম্বরে মাসে আমরা টিসিবি কার্ড নিয়ে বরাদ্দকৃত মালামাল নেওয়ার সময় স্থানীয় বিএনপি নেতারা আমাদের বলেন, এই কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই কার্ডে আর টিসিবি চলবে না।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘তারপর মহানগর বিএনপি সদস্য তাজউদ্দীন সেন্টু, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের আমির মো. মনিরুজ্জামান এবং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতারা আমাদের এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার্ড তুলে নিচ্ছেন। আমরা আমাদের কার্ড দিইনি। আমরা ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারি, ওয়ার্ড সচিবকে বদলি করা হয়েছে। তাজউদ্দীন সেন্টু কাউন্সিলর অফিসের সামনে বলেছেন, “আমরা বিএনপি-জামায়াতে ইসলাম সমন্বয় করে কমিটি করেছি, অতীতের সব কার্ড বাতিল।” আমাদের প্রশ্ন, এভাবে বাতিল করা যায় কি না?’
৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পলিটিক্যাল লোকজন কার্ড বাতিলের আবেদন নিয়ে এলে আমি আমার দুজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিই। দুই কর্মকর্তা সরেজমিনে ঘুরে এসে আমাকে জানান, কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, তাঁরা দরিদ্র বলেই কার্ড পেয়েছিলেন। অতীতে কার্ড পেয়েছিলেন বলে এখন বাদ দেওয়া হলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁদের দাবি, কার্ড যেন বাতিল করা না হয়।
নারীরা জানান, কয়েক দিন আগে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কার্যালয়ে যান এবং কার্ড বাতিলের চাপ দেন। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কার্ড বাতিল করতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব আহাদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে তাঁকে বদলি করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে আহাদ আলী বলেন, ‘৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকার সময় কিছু লোক আমার কাছে আসেন এবং কার্ড বাতিলের চাপ দেন। আমি বলি, এভাবে কার্ড বাতিল করতে পারি না। তারা যেন নগর ভবনে যান। তারপর কী হয়েছে, বলতে পারব না।’
জানতে চাইলে ওয়ার্ড জামায়াতের আমির মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পরে অবশ্য তিনি বলেন, যেটা ঘটছে, সেটা সিটি করপোরেশনের নির্দেশেই ঘটছে। তাঁরা কিছুই করেননি।
জানতে চাইলে মহানগর বিএনপি সদস্য তাজউদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন কাউন্সিলর থাকাকালে টিসিবির কার্ড দলীয়করণ করেছিলেন। এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ নেই, তাই তাঁরা তালিকা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের সবাই মিলেই কাজটা করছেন। তবে কারও বাড়ি থেকে টিসিবির কার্ড কেড়ে আনছেন না। এসব কার্ড এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। তাঁরা শুধু বাড়ি বাড়ি তথ্য নিচ্ছেন।
বিএনপি নেতা তাজউদ্দীনের দাবি, টিসিবির কার্ড বাতিলের দাবি নিয়ে তাঁরা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলেন। তখন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁকে আহ্বায়ক কমিটি করে একটি চিঠি দিয়েছেন। কমিটিতে জামায়াতেরও লোক আছেন। মোট ছয় সদস্যের এই কমিটি এখন কার্ড হালনাগাদ করার কাজ করছে। তাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
তবে এমন কোনো কমিটি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো কমিটি করলে সিটি করপোরেশনের লোক দিয়ে করতে পারি। অন্য কাউকে দিয়ে তো কমিটি করতে পারি না। কার্ড হালনাগাদ করতে হলে সেটা সিটি করপোরেশনই করবে। অন্য কেউ তো এটা করতে পারবে না।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, দলীয় নেতাদের কথায় তিনি ওয়ার্ড সচিব আহাদকে বদলি করে দিয়েছেন।
এ বি এম শরীফ বলেন, ‘৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পলিটিক্যাল লোকজন কার্ড বাতিলের আবেদন নিয়ে এলে আমি আমার দুজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিই। তাঁদের বলি, যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সেটা হালনাগাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুই কর্মকর্তা সরেজমিনে ঘুরে এসে আমাকে জানান, কোথাও কোনো সমস্যা নেই।’