কার্যালয়ে আসছেন না ২৭ ইউপি চেয়ারম্যান

জন্মসনদ, মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানান জরুরি কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

লক্ষ্মীপুর জেলার মানচিত্র

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৭ জন চেয়ারম্যান। অনেক ইউপি সদস্য ও নারী ইউপি সদস্যরাও লাপাত্তা। ফলে জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন পরিষদের ২৭টিতে দাপ্তরিক কাজে কার্যত স্থবিরতা চলছে। জন্মসনদ, মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানান জরুরি কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

লাপাত্তা ২৭ ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে রামগঞ্জের ৭ জন, রায়পুরের ২ জন, লক্ষ্মীপুর সদরের ১০ জন, রামগতির ৪ জন ও কমলনগরের ৪ জন।

বাকি ২৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে যাঁরা এলাকায় রয়েছেন, তাঁরাও গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ খুব জরুরি প্রয়োজনে হঠাৎ দপ্তরে বা কোনো নিরাপদ স্থানে এসে বিল, ভাউচার, বেতন ইত্যাদি কাগজপত্রে সই করছেন। তাঁরা আত্মগোপনে থাকায় চারিত্রিক সনদ, নাগরিকত্ব, জন্মনিবন্ধন বা এ ধরনের সনদ সংগ্রহ করতে ভোগান্তিতে পড়ছেন এসব এলাকার লোকজন। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।

জেলার রামগঞ্জের ভাদুর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভাদুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাবেদ হোসেন এলাকা থেকে লাপাত্তা। চেয়ারম্যান ও সদস্য—কেউ কার্যালয়ে আসেন না। জন্মনিবন্ধনের সবকিছু ঠিকঠাক শুধু চেয়ারম্যানের সই বাকি। এই সইয়ের জন্য জানি না আর কত দিন এভাবে ঘুরতে হবে।

 ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান। তিন দিন ধরে নাগরিক সনদের জন্য ইউপি কার্যালয়ে গিয়েছেন ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাইফুল আলম। তিনি বলেন, একটি চাকরির আবেদনের জন্য নাগরিক সনদ প্রয়োজন। এ জন্য ইউপি কার্যালয়ে গিয়েছেন তিন দিন। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় এখনো সনদ নিতে পারেননি।

রায়পুর উপজেলার চর মোহনা ইউনিয়নের উত্তর রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান পাঠান এলাকায় নেই। এ জন্য তিনি ওয়ারিশ সনদ নিতে পারছেন না। এ কারণে একটি বিক্রীত জমি রেজিস্ট্রি দিতে পারছেন না।

চলতি নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি লক্ষ্মীপুর জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আত্মগোপনে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানদের তথ্য জানিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। লক্ষ্মীপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী আমরা জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকা ও না থাকার একটা তালিকা পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৫৮টি ইউপিতে ৫৮ জন চেয়ারম্যান দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ২৭ জন চেয়ারম্যান এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন সদর উপজেলার চররুহিতার চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী ও তেওয়ারীগঞ্জের ওমর ফারুক। ফলে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে নাগরিকদের।

গা ঢাকা দেওয়া জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগের মুঠোফোনও বন্ধ। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া গেল শুধু রামগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল ইসলামকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব দিকে এখন পরিস্থিতি খুব খারাপ। ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীদের বেতন, বিলসহ জরুরি কাগজপত্রে সই করতে গোপনে মাঝেমধ্যে এলাকায় যান। অনেক সময় বিশ্বস্ত লোক কাগজপত্র নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে এলে তিনি সই করে দেন।

ইউপি কার্যালয়ের তিনজন সচিব জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া পরিষদ কার্যত অচল। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে বিল দেওয়াসহ অনেক ক্ষেত্রেই চেয়ারম্যানের সই প্রয়োজন হয়। চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় পরিষদের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সর্বশেষ অবস্থা জানতে গত সপ্তাহে ইউএনওর মাধ্যমে ইউপি কার্যালয়গুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন, সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য পাওয়ার পর এ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। আর যেসব ইউপিতে চেয়ারম্যান লাপাত্তা, সেখানে সচিবদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়া আছে।