পড়াশোনায় আগ্রহী তানাজকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল বাবা–মায়ের
‘আমার মেয়ে তানাজ খুব মেধাবী ছিল। পড়াশোনায় অনেক মনোযোগ ছিল। পড়ালেখার প্রতি ওর আগ্রহ দেখে ওর বাবা ওকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। জানি না কোন অপরাধে আল্লাহ আমাদের এমন কঠিন শাস্তি দিলেন।’
আজ সোমবার দুপুরে শেরপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকার বাসিন্দা মনিরা বেগম। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু একসঙ্গে দুই সন্তান হারানোর কষ্ট ভুলতে পারছেন না মনিরা।
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় গতকাল রোববার সকালে মাইক্রোবাস ও একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় মনিরা বেগমের দুই সন্তান আনাছ আহনাফ ও মাশুরা নোকাদ্দেস তানাজ। একই দুর্ঘটনায় মনিরা ও তাঁর স্বামী মোকাদ্দেসুর রহমানসহ আরও কয়েকজন আহত হন। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচূড়া গ্রামের বাসিন্দা মোকাদ্দেসুর রহমান এখন সুস্থ। তবে গুরুতর আহত হওয়ায় আজ সোমবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মনিরা বেগমকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মনিরা বেগমের বাবা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই সন্তানকে নিয়ে আমার মেয়ে, মেয়ের জামাই মিলে আমার মেজ ছেলে কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমানকে আনতে ঢাকায় যাচ্ছিল। আমি একটু অসুস্থ থাকায় যেতে পারিনি। তারা হাসিখুশি মুখে ভোরবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কে জানত আমাদের পরিবারে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে?’
মোকাদ্দেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তানাজ খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। জেএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর তানাজ এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষায় সে ভালো ফলাফলের আশা করেছিল। ভবিষ্যতে তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। এ জন্য সে তার অসুস্থ মায়ের (মনিরা বেগম) ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করে দিত। কিন্তু দুর্ঘটনায় পরিবারের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
হাসপাতালে কান্নারত অবস্থায় তানাজের নানি কামরুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এই নাতনিরে ১৬ বছর লালন-পালন করলাম। কিন্তু রক্ষা করতে পারলাম না। দুর্ঘটনা ওর ছোট ভাইয়ের প্রাণটাও কেড়ে নিছে।’
দুর্ঘটনায় নিহত দুই বছরের শিশু আনাছ আহনাফ ও তার বোন মাশুরা নোকাদ্দেস তানাজকে (১৬) গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচূড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে রোববার বিকেলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে নিহত ভাই-বোনের লাশ চরশিমুলচূড়া গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছালে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুর্ঘটনায় ভাই-বোনের নিহত হওয়ার ঘটনায় শ্রীবরদীর চরশিমুলচূড়া গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে।