আ.লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে আহত ৪০, অর্ধশত মোটরসাইকেল ভাঙচুর

ভাঙচুর করা মোটরসাইকেলের পাশে লাঠি হাতে কয়েকজন যুবক। রোববার বিকেলে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সিঅ্যান্ডবি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

১৬ বছর পর বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওরফে মনির পাথরঘাটায় আসাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ঢাকা-পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া সড়কে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নুরুল ইসলামের ওপরও হামলা করা হয় বলে অভিযোগ বিএনপির। সংঘর্ষের পর এলাকায় ঢুকতে না পেরে পাশের পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় অবস্থান নিয়েছেন নুরুল ইসলাম।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ ১৬ বছর পর ঘোষণা দিয়ে রোববার বিকেলে পাথরঘাটায় আসার উদ্যোগ নেন নুরুল ইসলাম। আগামীকাল সোমবার তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। এই খবরে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে একই সময়ে সমাবেশের ডাক দেয়। এ কারণে আজ সকাল থেকে পাথরঘাটায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলামকেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির
ছবি: প্রথম আলো

নুরুল ইসলামের আগমন উপলক্ষে পাথরঘাটার সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ঢাকা-পাথরঘাটা মহাসড়কে অবস্থান নেন কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু এবং রায়হানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল ইসলামসহ তাঁদের কর্মীরা। বিকেল চারটার দিকে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বহর নিয়ে পৌঁছালে সংঘর্ষ হয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সংখ্যায় কম থাকায় তাঁদের ধাওয়া দিয়ে হটিয়ে দেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এরপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দল বেঁধে এসে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপরে হামলা চালান।

এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়াসহ অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। হামলায় বিএনপির ৩৫ এবং আওয়ামী লীগের ৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের পাথরঘাটা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নুরুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে অভিযোগ করেন, ঢাকা থেকে বিকেলে সড়কপথে পাথরঘাটায় আসছিলেন নুরুল ইসলাম। স্থানীয় বিএনপি নেতা–কর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে আসেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা সিঅ্যান্ডবি এলাকায় তাঁদের ওপর রড, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এ সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের মারধর ও ১০টি মোটরসাইকেলে আগুনসহ অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। হামলায় তাঁদের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও পাথরঘাটা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন কাজী রয়েছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের একাধিক মোটরসাইকেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগুন দেয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

তবে আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন পল্টু এবং মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় নেতা-কর্মী নিয়ে আমরা পাথরঘাটা উপজেলার সীমান্ত সিঅ্যান্ডবি এলাকায় একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। পথে বিএনপি নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে নুরুল ইসলাম পাথরঘাটায় ঢুকতে পারেননি।’

হামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন বলেন, নুরুল ইসলাম দলীয় সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে সাধারণ জনতা ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা তাঁকে প্রতিহত করেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু ও মাইনুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নুরুল ইসলামের বহরে হামলা চালান বলে দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতে নুরুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। আমাদের বহরে থাকা শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, উভয় পক্ষ পরস্পরের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে—এ কথা সত্য। তবে আগে সিঅ্যান্ডবি এলাকায় আলাউদ্দিন পল্টু ও মইনুল ইসলামের ওপর হামলা চালান বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

দুই দলের কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘কোনো পক্ষ সমাবেশের প্রস্তুতি নিলে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কঠোর হব।’