বাঁশখালীর পৌর মেয়রের অনিয়ম নিয়ে সংসদ সদস্যের চিঠি
চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভা থেকে জনগণ প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন খোদ স্থানীয় (চট্টগ্রাম-১৬) আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাতে পৌরসভার সেবা এবং মেয়রের অনিয়মের কারণে সংসদ সদস্যকে প্রতিনিয়ত জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে এস এম তোফাইল বিন হোসাইন আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে নামে-বেনামে প্রকল্প নিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ, ভবন–ইমারত নির্মাণ বিধিমালাসহ ভঙ্গ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের আইন ও বিধির তোয়াক্কা না করার অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানের অভিযোগ, ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য একটি কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ নেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে মেয়র তোফাইল কোনো প্রকার কমিটি গঠন করেননি। কমিটির সুপারিশ ছাড়াই তিনি শতাধিক ভবনের নকশা অনুমোদন করেছেন। এ ছাড়া মেয়রের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ সালের বাজেট ঘোষণা না করা, মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ব্যতীত গাড়িচালক নিয়োগ প্রদান করার অভিযোগ এনেছেন সংসদ সদস্য।
সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান ৬ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। এ নিয়ে জানতে চাইলে মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার লোকজন পৌরসভার কোনো সেবা পাচ্ছেন না। ট্রেড লাইসেন্স, ভবনের নকশা নিতে গেলে কমিশন দিতে হয়। নকশা প্রণয়নে কোনো কমিটি নেই। পৌরসভার কার্যক্রমে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। তিন–চারজন নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ ভাগাভাগি করেন মেয়র। বাকিদের ঠিকাদারি লাইসেন্সও নবায়ন করেন না।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, পৌর এলাকার জনগণ ও পৌরসভার কাউন্সিলররা সংসদ সদস্যকে মৌখিকভাবে সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রমিজ সফটওয়্যারে বিভিন্ন তথ্য আপলোড করা হয় না। তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত মেয়র তা করেননি।
দুদকে নথি তলব
এদিকে স্থানীয় সরকারের পৌরসভা আইন না মেনে ভবনের নকশার অনুমোদন দেওয়ায় মেয়র এস এম তোফাইল বিন হোসাইনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিয়ম অনুযায়ী পৌর এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইমারত নির্মাণের নকশা অনুমোদনের জন্য মেয়রের সভাপতিত্বে ১১ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা রয়েছে। কিন্তু মেয়র তোফাইল কোনো কমিটি না করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে শতাধিক ভবন ও ইমারতের নকশার অনুমোদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ নিয়ে অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধানকারী দলের প্রধান দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক ২ জুলাই চিঠি দিয়ে এ–সংক্রান্ত নথি তলব করেছেন।
জানতে চাইলে আবদুল মালেক বলেন, বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে কমিটি গঠন ছাড়াই ভবন অনুমোদনের একটা অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে রেকর্ডপত্র তলব করা হয়েছে। ইমারত নির্মাণসংক্রান্ত পরিপত্র তিনি মানছেন না বলে অভিযোগ।
অভিযোগ সম্পর্কে মেয়র এস এম তোফাইল বিন হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নকশা প্রণয়ন কমিটির মাধ্যমে হয়। আমাদের কাছে কিছু নথিপত্র তলব করেছে দুদক। সেগুলো দেওয়া হবে। এর মধ্যে সাবেক মেয়রের কিছু নথিও চাওয়া হয়েছে।’