অনুমতি ছাড়া বনায়নের গাছ কাটলেন সওজের দুই কর্মকর্তা, জব্দের নির্দেশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই সামাজিক বনায়নের দুটি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। কয়েক দিন ধরে উপজেলার পাড়াতলী এলাকায় বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ সড়কের পাশ থেকে এসব গাছ তাঁদের নির্দেশে কাটা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পরে গাছগুলো জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হওয়ায় এগুলো কাটা হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সদর থেকে কুমিল্লা মুরাদনগরের স্বল্পা পর্যন্ত সড়ক ও জনপথের ১৬ কিলোমিটার সড়ক আছে। এর মধ্যে উপজেলার ফতেপুর মোড় থেকে রূপসদী কবরস্থান পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে সামাজিক বনায়নের বাগান করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের দিকে সেখানে একাশি, কড়ই, শিশু, অর্জুন প্রভৃতি গাছ লাগানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক দিন উপজেলার পাড়াতলী সেতুর পূর্ব পাশে থেকে কয়েকটি গাছের ডাল ও দুটি একাশিগাছ শ্রমিকদের কাটার নির্দেশ দেন বাঞ্ছারামপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান। আর এ কাজের তদারকি করেন উপসহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ।
অভিযোগ উঠেছে, সওজ দপ্তরের জন্য আসবাব তৈরি করতে এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর নির্দেশে সামাজিক বনায়নের গাছ দুটি কাটা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সওজের এক কর্মকর্তা জানান, ‘উপজেলা কার্যালয়ের আসবাব তৈরির জন্য উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর নির্দেশে গাছ দুটি কাটা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তাঁদের সুর এখন পাল্টেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক দিন উপজেলার পাড়াতলী সেতুর পূর্ব পাশে থেকে কয়েকটি গাছের ডাল ও দুটি একাশিগাছ শ্রমিকদের কাটার নির্দেশ দেন বাঞ্ছারামপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান। আর এ কাজের তদারকি করেন উপসহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ফতেপুর মোড় থেকে রূপসদী কবরস্থান পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ দাঁড়িয়ে আছে। পাড়াতলী সেতুর পূর্ব পাশের সড়ক থেকে দুটি একাশিগাছ কাটা হয়েছে। বর্তমানে শুধু গাছের গোড়ার অংশ রয়েছে। বাকি অংশগুলো সওজের কর্মকর্তাদের নির্দেশে শ্রমিকেরা সওজের উপজেলা কার্যালয়ে নিয়ে যান।
রূপসদী গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, সওজের কয়েকজন শ্রমিক কয়েক দিন ধরে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য গাছের ডাল কেটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তার পাশের দুটি একাশিগাছ কেটেছেন তাঁরা। একই কথা জানান পাড়াতলী গ্রামের আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেছেন, সওজের দুই কর্মকর্তা তাঁদের গাছ কাটতে বলেছেন।
সড়কের পাশের হেলে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক দুটি গাছ কাটা হয়েছে। গাছের ডালগুলো বন বিভাগ নিয়ে যাবে। ডালগুলো অনেক চিকন। এগুলো লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, অন্য কোনো কাজে লাগবে না।মামুনুর রশিদ, বাঞ্ছারামপুর সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী
বিষয়টি নিয়ে সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নবীনগর উপজেলার বন কর্মকর্তা ও বাঞ্ছারামপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা উত্তম কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘সওজের ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়কের পাশের ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার জন্য তাঁদের কাছে চিঠি এসেছে। কিন্তু সড়কের গাছগুলো সামাজিক বনায়নের আওতায় লাগানো। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া সওজ কর্মকর্তারা কোনোভাবেই এসব গাছ কাটতে পারেন না। ইউএনও গাছগুলো আমাদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা গাছগুলো হেফাজতে নেব।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঞ্ছারামপুর সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের পাশের হেলে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক দুটি গাছ কাটা হয়েছে। গাছের ডালগুলো বন বিভাগ নিয়ে যাবে। ডালগুলো অনেক চিকন। এগুলো লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, অন্য কোনো কাজে লাগবে না।’ দপ্তরের আসবাব বানানোর জন্য এসব গাছ কাটা হয়েছে কি না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সঠিক নয়।’
বিষয়টি শুনেছি। বন কর্মকর্তাকে গাছগুলো জব্দের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তবে সওজ দাবি করেছে, গাছগুলো রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। তাই তারা এগুলো কেটেছে।মুহাম্মদ আবুল মনসুর, বাঞ্ছারামপুরের ইউএনও
মুঠোফোনে ও খুদে বার্তায় সাড়া না দেওয়ায় উপজেলা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি জানান, দপ্তরের আসবাব বানাতে নয়, জরুরি প্রয়োজনে গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে এসব গাছ তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন। এরপরও বিষয়টি তিনি দেখবেন।
বাঞ্ছারামপুরের ইউএনও মুহাম্মদ আবুল মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। বন কর্মকর্তাকে গাছগুলো জব্দের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তবে সওজ দাবি করেছে, গাছগুলো রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। তাই তারা এগুলো কেটেছে।’