সঞ্চয়ের টাকা পেয়ে নারী শ্রমিকদের দিন বদলের স্বপ্ন

সঞ্চয়ের টাকার চেক একজন নারী শ্রমিকের হাতে তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা। গত ৯ জুলাই বগুড়ার শেরপুরেছবি: প্রথম আলো

কেউ কিনবেন গরু-ছাগল, কেউ আবার ফসলি জমি পত্তন নিয়ে করবেন সবজি চাষ। সঞ্চয়ের টাকার চেক পেয়ে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন বগুড়ার শেরপুরে ১০টি ইউনিয়নে গ্রামীণ সড়কে কাজ করা ১০০ নারী শ্রমিক।

তারা চার বছর মেয়াদি উপজেলায় পল্লি কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩–এর আওতায় নারী শ্রমিকের কাজ করতেন। এই প্রকল্প পরিচালনা করতেন উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কার্যালয়। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১ মে থেকে শুরু হয়। এই প্রকল্পের শেষ দিন ছিল চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রমতে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের ১০০ নারী শ্রমিক প্রতিদিন ২৫০ টাকা মজুরি হিসেবে গ্রামীণ সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করতেন। সঞ্চয়ের জন্য মজুরির টাকার মধ্যে থেকে প্রতিদিন ৮০ টাকা হিসেবে কাটা হতো। চার বছর পর গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ব্যাংক ইন্টারেস্টসহ সঞ্চয়ের ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৬ টাকার চেক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সূত্রমতে, দরিদ্র পরিবারের নারীদের সংসারে স্বচ্ছলতার জন্য এমন প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের অধিদপ্তরের আওতায় ২০১১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০০ জন নারী শ্রমিক চার বছর করে কাজ শেষে সঞ্চয়ের টাকা পেয়েছে।

এই সঞ্চয়ের টাকার চেক পেয়ে উপজেলা শাহবন্দেগী ইউনিয়নের নাজমা খাতুন বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছিলাম। তখন শেরপুর প্রকৌশলী অফিসের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতায় কাজ পাই। প্রতিদিন পরিশ্রম করে যে টাকা পেয়েছি, এই টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলেছে। কষ্ট করে হলেও একমাত্র ছেলেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করাইছি। এখন সঞ্চয় টাকা দিয়ে গরু, ছাগল ও ভেড়া কিনমু।’

সঞ্চয় টাকার চেক পেয়ে তাঁর চোখেমুখে হাসি গাড়িদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের সাহেরা খাতুনের (৪০)। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো জমিজমা নেই। রয়েছে দুটি গরু। টিনের একটি বাড়ি রয়েছে নিজস্ব জায়গায়। এই সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে জমি পত্তন নিমু। সেই জমিতে ভুট্টা, আলু, সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করমু।’

এ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) লিয়াকত হোসেন বলেন, এই প্রকল্পে আওতায় একজন নারী শুধু একবারই এই কাজে শ্রমিক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। চার বছর পর প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আগামী দিনে এই প্রকল্পের আওতায় আরও ১০০ নারীকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই নিয়োগে থাকবে সব নতুন মুখ।

চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন জিহাদী।