ফেনীতে চলছে আঞ্চলিক গণিত উৎসব
ফেনীতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব। আজ শনিবার সকালে ফেনী সরকারি কলেজ মাঠে জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে উৎসবে এসেছে সুপর্ণা চাকমা। সে উৎসবে অংশ নিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আগের দিন বিকেলে ফেনী এসে রাত কাটায়। আজ সকাল আটটা থেকেই কলেজ মাঠে খুদে গণিতবিদেরা আসতে শুরু করে। সকাল ৯টার আগেই মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের প্রায় পাঁচ শ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে কলেজ মাঠ মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হাইয়ার সেকেন্ডারি—এই চার ক্যাটাগরির খুদে গণিতবিদেরা সারিবদ্ধভাবে মাঠে দাঁড়িয়ে যায়। বেলুন উড়িয়ে করা হয় উৎসবের উদ্বোধন। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এগিয়ে যায় উৎসবের কার্যক্রম।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই উৎসবের আয়োজন করেছে। উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ফেনীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্–বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ফেনী শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম রায়হান কাউসার।
উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, গণিত উৎসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গণিতপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। তারা দেশে-বিদেশে আলো ছড়াবে। ভবিষ্যতে রোবোটিক ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার তৈরিতে সহায়তা করবে।
অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন বলেন, গ্রামের শিক্ষার্থীরা গণিতকে ভয় পায়। প্রথম আলো এ আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সেই ভয় দূর করে গণিতে পারদর্শী করে। তাদের এই আয়োজন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।
এ কে এম রায়হান কাউসার বলেন, ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়াসহ নানা সামাজিক কার্যক্রম করে থাকে। গণিত ছাড়াও বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে সহায়তা করে।
কুমিল্লায় কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হকের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বে চুয়েটের গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. ইফতেখার মনির, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নিজাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রাজীব কর্মকার, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবদুল করিম, ফেনী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আফতাব উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোশারফ হোসেন, জয়নাল হাজারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আবদুল হালিম ও প্রথম আলোর ফেনী প্রতিনিধি আবু তাহের উপস্থিত ছিলেন।
পরে শিক্ষার্থীরা সোয়া ঘণ্টার গণিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে কলেজ মিলনায়তনে শুরু হয় বন্ধুতা পর্ব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের গণিত বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন বিশিষ্ট গণিতবিদেরা। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী পর্ব হবে। এই পর্বে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। যারা ঢাকায় জাতীয় গণিত উৎসবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।