রাজশাহী মেডিকেলে লিফট বসানোয় জালিয়াতি, অপসারণের নির্দেশ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন নতুন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লিফট লাগানোয় জালিয়াতি ধরা পড়ায় তা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ঠিকাদারকে লিফট খুলে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হবে।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন তিনি পেয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্রের লিফটের সঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাগানো লিফটের মিল পাওয়া যায়নি। দরপত্রে ‘এ’ ক্যাটাগরির লিফট চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই লিফট ‘এ’ ক্যাটাগরির নয়। এই লিফট অপসারণের জন্য মঙ্গলবার ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হবে। আপাতত লিফট অপসারণ করা হবে। তারপর অন্য সিদ্ধান্ত হবে।
অনিয়মের বিষয়ে ৯ মার্চ প্রথম আলোয় ‘ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লিফট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই ১ হাজার ৬০০ কেজি প্যাসেঞ্জার কাম বেড লিফটটি দরপত্র মোতাবেক ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করা শুরু হয়। যাচাইয়ের জন্য রাজশাহী গণপূর্ত ই/এম পিঅ্যান্ডডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন জয়পুরহাট গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুর্তুজা আল মাহমুদ। আর সদস্য হচ্ছেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগ-১–এর সহকারী প্রকৌশলী মো. রাসেল হাসান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের একাংশের পাঁচতলায় নতুন করে আইসিইউ ইউনিট নির্মাণ করা হয়। এই নির্মাণকাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কাজ পেয়েছেন ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনের মালিক জাকির হোসেন। এই ইউনিটে তিনটি স্মার্ট দরজা লাগানোর কথা থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন তিনটি কাঠের দরজা লাগিয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে আপত্তি জানানোর পর তিনটি দরজায় পাল্টে কাচের করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নতুন আইসিইউ ইউনিটে বেড কাম প্যাসেঞ্জার লিফট লাগানোর কথা ছিল। ঠিকাদারের লোকজন সেখানে বেড লিফট না লাগিয়ে প্যাসেঞ্জারস লিফট লাগিয়ে দেন।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বারবার দেখতে চাওয়া হলেও ঠিকাদারের লোকজন তাঁদের লিফট দেখাচ্ছিলেন না। তাঁরা বলেছিলেন, লিফট লাগানো সম্পন্ন হওয়ার পর দেখলেই চলবে। লাগানোর পর তিনি (কর্মকর্তা) দেখেন বেড লিফটের বদলে প্যাসেঞ্জার লিফট লাগানো হয়েছে। এ নিয়ে তিনি আপত্তি তোলেন। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে যায়। তারা ঠিকাদারকে প্যাসেঞ্জার লিফট পাল্টে বেড লিফট লাগানোর জন্য নির্দেশ দেয়। গত মার্চ মাসে আগের লাগানো লিফট খুলে নতুন করে লিফট লাগানো হয়। গত ৮ মার্চ হাসপাতালের নতুন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, আগের লিফট খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে নতুন লিফট লাগানোর কাজ চলছে।
সোমবার বিকেলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সোমবার তিনি এ বিষয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন। তিনি লিফটের সব তথ্য চেয়েছেন। গণপূর্তের কমিটি কাজ করছে। পাশাপাশি তিনি নিজে সব দেখবেন।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, লিফট লাগানোর সময় সন্দেহ হওয়ার কারণে তিন সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন এক সপ্তাহের মধ্যে এই লিফট অপসারণ করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলে ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনের মালিক জাকির হোসেন বলেন, তিনি লিফট অপসারণের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাননি। তবে সমস্যা থাকলে সমাধান করা হবে।