রাজবাড়ীতে কলেজছাত্র তানভীর হত্যা মামলায় ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার, আদালতে স্বীকারোক্তি
রাজবাড়ীতে কলেজছাত্র তানভীর শেখ হত্যা মামলায় জাহিদুল ইসলাম ওরফে জিসান (২১) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাত ১১টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন জাহিদুল।
জাহিদুলের স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সোনাকান্দর কবরস্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি সুইচ গিয়ার ও চাপাতি উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন জাহিদুল।
গ্রেপ্তার জাহিদুল রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের কামালদিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও রাজবাড়ী পৌর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তানভীর হত্যা মামলায় তিনি ২ নম্বর আসামি। অন্যদিকে তানভীর (২১) রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিনোদপুর মহল্লার বাসিন্দা ও একই ওয়ার্ড ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জুলাই-আগষ্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষে সক্রিয় ছিলেন তানভীর।
তানভীর হত্যার বিচার দাবি এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং স্মারকলিপি প্রদানের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে বিনোদপুরবাসী, তাঁর বন্ধু, কলেজের শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
নিহত ব্যক্তির পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন জানান, ১২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে শহরের বিনোদপুর এলাকায় একটি মুদিদোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন তানভীর। হঠাৎ ১০-১২ জন তরুণ সেখানে গিয়ে তাঁদের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তানভীরকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন। তানভীর একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁর আর্তচিৎকার শুনে সেখানে যান স্থানীয় লোকজন। পরে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তানভীরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক তানভীরকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরদিন ১৩ নভেম্বর তানভীরের মামা আলম শেখ বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এতে প্রধান আসামি হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ ও ২ নম্বর আসামি হিসেবে জাহিদুল ইসলাম জিসানের নাম উল্লেখ করা আছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব গতকাল রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তানভীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তাঁর দেখানো জায়গা থেকে গতকাল বেলা দুইটার দিকে উপজেলার মিজানপুর ইউপির সোনাকান্দর কবরস্থান সংলগ্ন মৌলভীঘাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি স্টিলের সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি লোহার চাপাতি উদ্ধার করা হয়। সোমবার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করলে তানভীর হত্যার দায় স্বীকার করে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত জিসান ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ঘটনার প্রসঙ্গে পুলিশ জানায়, ২ নভেম্বর শহরের রেলগেট এলাকার টোকাই–সংলগ্ন স্থানীয় একটি রঙের দোকানের সামনে অটোরিকশা রাখা নিয়ে জাহিদুল ইসলাম জিসানের বড় ভাই জুয়েলের সঙ্গে অটোরিকশা চালকের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার সূত্রধরে স্থানীয় দুটি পক্ষ বিরোধে জড়িয়ে পরেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ায় জিসান এবং তানভীরের মধ্যে। পরবর্তী সময়ে জিসান তাঁর লোকজন নিয়ে তানভীরকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তিতে জানা গেছে।