পঞ্চগড়ে ‘গলায় ফাঁস দেওয়া’ নারী চিকিৎসকের লাশ পড়ে ছিল মেঝেতে

ঝুলন্ত লাশপ্রতীকী ছবি

পঞ্চগড়ে ফাইরুজ আনিকা ওয়াসিমা প্রীনন (৩৩) নামের এক নারী চিকিৎসকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শোবার ঘরের বৈদ্যুতিক ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। তাঁদের দাবি, গলায় ফাঁস দেওয়া ওড়না ছিঁড়ে তিনি ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে জেলার বোদা পৌরসভার প্রামাণিকপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া চিকিৎসক ফাইরুজ আনিকা বোদা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল আজিজের মেয়ে। তিনি বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জন হিসেবে পদায়ন হলেও প্রেষণে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসক ফাইরুজ আনিকা ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইকে প্রতিদিন সকালে কর্মস্থলে যেতেন। আজ সকাল আটটার দিকে তাঁকে নিতে ইজিবাইকটি তাঁর বাড়িতে গেলেও তিনি ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন না। তখন স্বজনেরা তাঁকে ডাকতে গিয়ে ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পান। তাঁরা জানালা দিয়ে তাঁকে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। দ্রুত দরজা ভেঙে দেখেন, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগানোর পর ওড়না ছিঁড়ে মেঝেতে পড়ে আছেন। তাঁকে উদ্ধার করে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ফাইরুজের বাবা আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ফাইরুজের কোনো মানসিক দুশ্চিন্তা ছিল কি না, তাঁরা বুঝতে পারেননি। পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর কোনো ঝগড়া বা সমস্যাও হয়নি। ২০১৯ সালে ৩৯তম বিসিএসে নিয়োগ পান। যোগ দিয়েছেন চলতি বছরের জুলাই মাসের ২ তারিখে। গত পাঁচ বছর সরকার নিয়োগ আটকে রেখেছিল। এ সমস্যাই তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

আবদুল আজিজ আরও বলেন, ‘ওরা দুই বোন একই কক্ষে থাকত। ছোট মেয়েটা রংপুরে কোচিংয়ে যাওয়ায় সে একাই ছিল। গতকাল ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রামের কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরে। কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া হয়নি। আমরা এই ঘটনায় কিছুই বুঝতে পারছি না।’

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই চিকিৎসককে আমরা মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পেয়েছি। হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর গলায় দাগ ছিল। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব নয়।’

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশ পায়। স্বজনদের কাছে জানতে পেরেছে, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তিনি ফাঁস দিয়েছিলেন। ওড়না ছিঁড়ে মেঝেতে পড়ে ছিলেন। লাশের প্রাথমিক সুরতহালে গলায় ফাঁস দেওয়ার দাগ ছাড়া অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় কারও কোনো অভিযোগ না থাকায় স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।