শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা বলে অটোরিকশা ভাড়া, পরে কিশোর চালককে হত্যা করে ছিনতাই
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাব্বি মিয়া (১৩) পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকেও কাজে সাহায্য করত। গতকাল বৃহস্পতিবার অটোরিকশাচালক বাবা দুপুরের পর বাড়িতে খাবার খেতে এলে রাব্বি অটোরিকশা নিয়ে বের হয় প্রতিবেশীকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সে রাতে আর ফেরেনি। রাতভর না পেয়ে রাব্বির বাবা শুক্রবার সকালে থানায় যান সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে। থানায় জিডি করার পর জানতে পারেন, তাঁর ছেলেকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়েছে নদে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকার বানার নদের সেতুর নিচ থেকে রাব্বির লাশ উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেন।
নিহত রাব্বির মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের গুইলাকান্দা গ্রামে। সে ওই গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। সে স্থানীয় মহেশপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করত।
পরিবারের লোকজন বলে, দুপুরের দিকে রাব্বি ইজিবাইক নিয়ে বের হয় প্রতিবেশী মাজহারুল ইসলামকে (১৯) তাঁর শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দিতে। সঙ্গে মাজহারুলের স্ত্রীও ছিলেন। এর পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাব্বি বাড়িতে না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন খোঁজখবর শুরু করেন। তাঁরা জানতে পারেন, মাজহারুল তাঁর স্ত্রীকে পৌঁছে দিয়ে একই অটোরিকশায় চলে যান। তাঁরও খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে রাত দুইটার দিকে ত্রিশালের আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি অটোরিকশায় চার্জ শেষ হয়ে যায়। এ সময় ব্যাটারি খোলার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তাঁরা সেখান থেকে মাজহারুলকে আটক করে। পরে পুলিশ তাঁকে হেফাজতে নেয়। পুলিশকে মাজহারুল জানান, তিনি অটোরিকশাটি চুরি করে এনেছেন।
থানা-পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে পুলিশ মাজহারুলকে তাঁর সঠিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জের ঠিকানা দেন। সেই ঠিকানা যাচাই করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে রাব্বির নিখোঁজের ঘটনা। কারণ, ঈশ্বরগঞ্জ থানায় গিয়ে রাব্বির বাবা একটি জিডি করেন। এরই মধ্যে বানার সেতুর নিচে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। মাজহারুল তখন রাব্বিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। রাব্বির পরিবারও তা শনাক্ত করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য বিকেলে লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
ঘটনাটি তদন্ত করা ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, সুরতহালে নিহত রাব্বির মাথার পেছন দিকে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কী দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি মাজহারুল। এ ঘটনায় রাব্বির বাবা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। শনিবার মাজহারুলকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।