সড়কে মায়ের ছিন্নভিন্ন মরদেহের পাশে পড়ে ছিল শিশুটি

সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু। শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয় পুলিশ। নাম-ঠিকানা এখনো জানা যায়নিছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে একটি বাসে গাজীপুরের টঙ্গী ফিরছিলেন এক নারী। সঙ্গে এক বছরের কন্যাশিশু। বাসটি টঙ্গীর স্টেশনরোড এলাকায় বিআরটির উড়ালসড়কের ওপর নামিয়ে দেয় তাঁদের। উড়ালসড়ক নিচের সড়কে নামার জন্য শিশুটিকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন ওই নারী। এর মধ্যেই হঠাৎ পেছন থেকে আসা একটি গাড়ির নিচে চাপা পড়েন তিনি। কোল থেকে শিশুটি ছিটকে পড়ে সড়কে। শিশুটি প্রাণে বাঁচলেও মারা যান মা।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্টেশনরোড এলাকায় বিআরটি (বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প) উড়ালপথের ওপর এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। আর ওই নারীর মরদেহ পাঠানো হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে। বিকেল পাঁচটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত ওই নারী ও শিশুটির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে ইমাম পরিবহনের একটি বাসে ফিরছিলেন। বাসটি টঙ্গীর চেরাগআলী থেকে উড়ালপথে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এর মধ্যে স্টেশনরোড এলাকায় রাস্তার পূর্ব পাড়ে বাস থেকে নামেন। পাশেই উড়ালপথে ওঠা-নামার জন্য রয়েছে বিআরটি স্টেশন, যা এখনো চালু হয়নি। ওই নারী স্টেশন দিয়ে নিচের সড়কে নামার জন্য শিশুটিকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এর মধ্যেই হঠাৎ পেছন থেকে একটি গাড়ি এসে তাঁদের চাপা দেয়। শিশুটি কোল থেকে ছিটকে পড়ে সড়কে। আর গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই নারী। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক মো. মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, শিশুটি রাস্তার পাশে বসে আছে। পাশেই পড়ে আছে তার মায়ের ছিন্নভিন্ন মরদেহ। শিশুটি অনবরত কাঁদছিল। পরে আমরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি দেন। তার মাথা ও ঠোঁটে কিছুটা আঘাত আছে, তবে গুরুতর নয়। আর তার মাকে পাঠানো হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো ওই নারী বা শিশুটির নাম-পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তাদের সঙ্গে ইমাম পরিবহন নামের একটি বাসের টিকিট পাওয়া গেছে। সেখানে বাসে ওঠার স্থান ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট লেখা। আমরা পরিচয় নিশ্চিত হতে বাসটির কাউন্টারেও যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু তাঁরা কেউ পরিচয় বলতে পারছেন না। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত গাড়িটিও শনাক্তের চেষ্টা করছি।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে শুরু হয়ে উড়ালপথটি শেষে হয়েছে টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায়। দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে চেরাগআলী, মিলগেট, স্টেশনরোড, টঙ্গী বাজার, আবদুল্লাহপুর, হাউস বিল্ডিংসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপেজ। কিন্তু স্টপেজগুলো ব্যবহার বা উড়ালপথে ওঠা-নামার জন্য এখনো চালু হয়নি এলিভেটেড স্টেশন। তারপরও অধিকাংশ বাস উড়ালপথ ব্যবহার করছে। যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে যেখানে-সেখানে। এতে যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত স্টপেজে যেতে হচ্ছে হেঁটে। রাস্তা পারাপারেও দেখা দিয়েছে ঝুঁকি।