১৭০ টাকা মজুরির সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চা-শ্রমিকদের কৃতজ্ঞতা
প্রধানমন্ত্রীর ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনরত চা-শ্রমিকেরা। দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন তাঁরা। এত দিন ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করেছিলেন তাঁরা। আর কারও কথা বিশ্বাস না করে শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে আশ্বাস শুনে কাজে ফেরার কথা বারবার বলেছিলেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চা-শ্রমিকদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার। প্রধানমন্ত্রী মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এ ছাড়া রেশন, চিকিৎসা, ঘরসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য বলেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের চা-শ্রমিকেরা আগামীকাল থেকে চা-বাগানের কাজে যোগদান করবেন।’
ভাড়াউড়া চা-বাগানের নারী চা-শ্রমিক উষা হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আর কাউকে বিশ্বাস করিনি। প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করেছিলাম। তিনি আমাদের বিশ্বাস রেখেছেন। আমাদের এত দিনের আন্দোলন সফল হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
ভুরভুরিয়া চা-বাগানের চা-শ্রমিক আকাশ দোষাদ বলেন, ‘আমরা ১৯ দিন না খেয়ে আন্দোলন করেছি। অনেকে আমাদের অনেক কিছু বুঝিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে অনেকে টালবাহানা করেছেন। কিন্তু আমরা সেগুলো গুরুত্ব দিইনি। আমরা অপেক্ষা করেছি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু একটা করবেন। ১৭০ টাকা মজুরিতে আমরা খুশি। শুনেছি মজুরির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। চা-শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ মহৎ উদ্যোগকে আমরা শ্রদ্ধা করি। আগামীকাল থেকে আমরা চা-বাগানের কাজে যোগ দেব।’
ভাড়াউড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নুর মিয়া বলেন, ‘শ্রমিকেরা সবাই খুশি। আমাদের আন্দোলন সফল। শ্রমিকদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি কাল থেকে কাজে যোগ দিতে। শ্রমিকেরা সবাই কাজে যাবেন। আগামীকাল সাপ্তাহিক ছুটি। এদিন নগদ মজুরির মাধ্যমে কাজ হয়। ছুটির দিনেও শ্রমিকেরা কাজ করবেন। শ্রমিকেরা ক্ষতি পোষাতে বেশি করে কষ্ট করে চা-বাগানের কাজগুলো করবেন। দ্রুত চা-বাগানের চা পাতাগুলো তুলে দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আনন্দিত হবিগঞ্জের ২৩টি চা-বাগানের শ্রমিকেরাও। তাঁরা আগামী সোমবার থেকে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলেছেন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন সাঁওতাল আজ রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, আমাদের দাবির বিষয়ে যেন প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন। তাঁর সব সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব। এখন প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসায় আমরা খুশি।’
একই উপজেলার আমু চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি ধনেশ্বর বোনার্জি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আজ ঘোষণা এল। আমরা কাল রোববার সবাই বসব। নিজেদের মধ্যে আলোচনা হবে। আশা করি, সোমবার থেকে যথারীতি সবাই কাজে নামব।’
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেছিলেন চা-শ্রমিকেরা। চা-বাগানগুলোতে চলছিল ধর্মঘট। এই প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার বিকেলে চা-বাগানমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চা-বাগানমালিক এম শাহ আলমের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠকে শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বেড়েছে ৫০ টাকা। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন।