খুলনার বটিয়াঘাটায় বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলের চার নারী ফুটবলারকে মারধরের ঘটনায় করা মামলা তুলে নিতে আসামিরা হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যথায় নারী ফুটবলারদের শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
হুমকির ঘটনায় মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী নারী ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। আসামিদের হুমকিতে নারী ফুটবলাররা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
সাদিয়া নাসরিন বলে, ‘আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। তা না হলে আমাকে ও একাডেমির টিম মেম্বারদের শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হবে বলে হুমকি দেয়। এ ছাড়া তাঁরা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করে আমাকেসহ আমার টিমের সদস্যদের পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করবে বলেও হুমকি দিয়েছে। এরপর তারা গালিগালাজ করে চলে যায়। আমি সোমবারই থানায় জিডি করেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই উদ্বিগ্ন।’
বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির প্রথম আলোকে বলেন, সাদিয়া নাসরিনের জিডি–সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বটিয়াঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কৌশিক কুমার সাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কৌশিক সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিডির বিষয়টি আমরা আদালতকে জানিয়েছি এবং তদন্তের জন্য অনুমতি চেয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে মামলার আসামি নূপুর খাতুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাদের বাড়িতে গিয়েও বাড়ির ফটক তালাবদ্ধ দেখা গেছে। তাদের প্রতিবেশী হাসান মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁরা বাড়িতে থাকছেন না।
সাদিয়া, তার পরিবার ও সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদিয়ার পরিবার চাইত না, সে ফুটবল খেলুক। পরিবারের চোখ এড়িয়ে নিজ গ্রাম বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলার সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে সে অনুশীলন করত। এ নিয়ে স্থানীয় অনেকের কাছে তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। সর্বশেষ নূপুর খাতুন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা তার খেলার ছবি তুলে পরিবারকে দেখিয়ে, তার হাফপ্যান্ট পরা নিয়ে নানা আপত্তিকর কথা বলেন। শনিবার বিকেলে এর প্রতিবাদ করতে নূপুরের বাড়িতে গিয়েছিল সাদিয়া, মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মণ্ডল। এতে নূপুরের পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হন। পরে নূপুরের ভাই আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, বাবা নুর আলম, মা রঞ্জি বেগম ও আত্মীয় মনোয়ারা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে চার খেলোয়াড় আহত হয়। হামলার সময় নুর আলমের লোহার রডের বাড়িতে মাথায় গুরুতর আঘাত পায় মঙ্গলী। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ৩০ জুলাই রাতে নূপুর খাতুন, তাঁর বাবা নুর আলম, ভাই সালাউদ্দিন এবং মা রঞ্জি বেগমকে আসামি করে থানায় মামলা করে সাদিয়া। ওই মামলায় নুর আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার পরদিন নূপুর, তাঁর মা ও ভাই সাদিয়াকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। অন্যথায় সাদিয়া ও তার একাডেমির খেলোয়াড়দের শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকি দেয় বলে তারা অভিযোগ করেছে।
একাডেমির ক্যাপ্টেন ঋতু বৈরাগী প্রথম আলোকে বলে, ‘অনুশীলনে আসতে যেতে সবাই ভয় পাচ্ছে। এখন একাডেমির লোকজনই আমাদের আনছে, দিয়ে আসছে।’একাডেমির সহমহিলা–বিষয়ক সম্পাদক শাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার নিজের মেয়েও এখানে অনুশীলন করে। অভিভাবকেরা সবাই উদ্বিগ্ন। আবার যারা হুমকি দিয়েছিলেন, তাঁরা তো জামিন পেয়েছেন। তাই ভয় তো একটু থাকেই। একাডেমির মেয়েরা যে বাড়িতে থাকত, সেখানেও তারা ভয়ে থাকতে চাচ্ছে না। আমরাও রাখার সাহস পাচ্ছি না।’
মারধরের ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের ক্ষোভ
বটিয়াঘাটায় নারী ফুটবলারদের মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। বুধবার সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি নারীদের প্রতি বৈষম্য ও বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণসহ সামাজিক সচেতনতা তৈরি ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।