বাংলাবান্ধা সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে রক্তাক্ত হিজড়া কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে কিরণ ওরফে রাজু (৪৫) নামের এক হিজড়া নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন।
আজ সোমবার ভোরে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরসংলগ্ন সীমান্তের ৭৩২ নম্বর মেইন পিলারের ৫ নম্বর সাবপিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সকাল ৮টার দিকে বাংলাদেশের সীমান্তে ওই হিজড়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বিজিবির বাংলাবান্ধা বিওপির সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নির্যাতনের শিকার হিজড়া কিরণ ওরফে রাজু নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার বাপ্পী চত্বর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আবদুল মান্নান বলে জানা গেছে। কিরণসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ১১ জন হিজড়ার একটি দল কাজের আশায় রাতের আঁধারে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে জানা গেছে।
পাঁচ বিএসএফ সদস্য মিলে লাঠি ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে রাতভর মারধর করেন বলে দাবি কিরণের। ভোরবেলা তাঁকে বাংলাদেশি সীমান্তে ফেলে যান বিএসএফ সদস্যরা।
আজ দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হিজড়া কিরণ ওরফে রাজু প্রথম আলোকে বলেন, কাজের আশায় ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁরা ১১ জন হিজড়া একটি মাইক্রোবাসে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে গতকাল রোববার তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা সীমান্ত এলাকায় আসেন। সানজিতা নামে তাঁদের দলের একজন নেতা ভারতে যাওয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে এক দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। প্রতিজন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের ১১ জনকে ভারতে পাঠানোর কথা ছিল। গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে বৃষ্টির মধ্যেই তাঁদের সীমান্তে নিয়ে যান দালালেরা। এ সময় তাঁদের দলনেতা সানজিতাসহ ১০ জন দৌড়ে ভারতে পাড়ি দিতে পারলেও পায়ে সমস্যা থাকায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যান কিরণ। তাঁকে দেখতে পেয়ে বিএসএফ সদস্যরা আটক করেন। পরে পাঁচ বিএসএফ সদস্য মিলে লাঠি ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে রাতভর মারধর করেন বলে দাবি কিরণের। ভোরবেলা তাঁকে বাংলাদেশি সীমান্তে ফেলে যান বিএসএফ সদস্যরা। পরে বিজিবি সদস্যরা তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সেখান থেকে উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন।
কিরণ ওরফে রাজু আরও বলেন, ‘আমাকে মারধরের সময় হাত-পা ধরে মাফ চেয়েছি। বলেছি, আমি নতুন এসেছি, ভুল করেছি, আর কোনো দিন এখানে আসব না। এসব কথা বলার পরও পাঁচজন পোশাক পরিহিত বিএসএফ সদস্য আমাকে নির্মমভাবে মারধর করেছেন। আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি না।’
তবে দালালের নাম-পরিচয় ও তাঁর সঙ্গে আসা অন্য হিজড়াদের কারও মুঠোফোন নম্বর জানাতে পারেননি আহত কিরণ ওরফে রাজু।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রহিমুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আনার সময় ওই ব্যক্তির বাঁ হাতে ও মুখে কাটা দাগ ছিল। যেখান দিয়ে রক্ত ঝরছিল। শক্ত কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বাঁ হাতের হাড় ফ্র্যাকচার হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তির (কিরণ) ভাষ্য অনুযায়ী তিনি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় তাঁকে বিএসএফ সদস্যরা মারধর করেছে। বিষয়টি তাঁর (কিরণ) কাছেই শোনা। তবে বিজিবি বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। অবৈধভাবে সীমানা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের কারও কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে আমরা সোমবার বিকেলে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক আহ্বান করেছি।’