রাজবাড়ীতে মেয়ের সামনে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

মৃত্যুদণ্ডপ্রতীকী ছবি

পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মো. লতিফ কাজীর (৩৮) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সৈয়দ সিরাজ জিন্নাত এ রায় দেন।

সাজা পাওয়া মো. লতিফ কাজী রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বার্থা গ্রামের মতিয়ার কাজীর ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর আগে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বার্থা গ্রামের মতিয়ার কাজীর ছেলে লতিফ কাজীর সঙ্গে সদর উপজেলার মহিষবাথান গ্রামের মো. বিল্লাল মোল্লার মেয়ে বিউটি বেগমের (৩০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী লতিফ কাজী পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে তাঁর মেয়েকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। তাদের ঘরে ১৩ বছর বয়সী মিম নামের একটি মেয়ে ও ছয় বছর বয়সী মুসা নামের একটি ছেলে রয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে আরও জানা গেছে, পারিবারিক বিষয় নিয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধে৵ ঝগড়া ও কথা-কাটাকাটি হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে বিউটি তাঁর ছেলে মুসাকে নিয়ে ঘরের একে কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। পাশের কক্ষে মিম পড়াশোনা শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। ওই দিন রাত দুইটার পর লতিফ কাজী স্ত্রী বিউটি বেগমের বুকের ওপর উঠে বসে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায় কোপাতে থাকে। বিউটি হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তার ডান হাতের দুটি আঙুল কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বাঁ হাতের কবজির ওপর থেকে কনুই পর্যন্ত রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় বিউটির চিৎকারে পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা মিম দৌড়ে এসে এমন দৃশ্য দেখে জোরে চিৎকার করতে থাকে আর বাবাকে বলতে থাকে, ‘বাবা তুমি মাকে মেরো না।’ মেয়ের কথা না শুনে লতিফ মেয়ের সামনেই তাঁর স্ত্রীর মাথা, কপাল ও গলায় কোপ বসায়। একপর্যায়ে মিম জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকলে আশপাশের লোকজন টের পাওয়ায় লতিফ ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন ১৯ জানুয়ারি রাজবাড়ী সদর থানায় লতিফ কাজীকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেন তাঁর শ্বশুর বিল্লাল মোল্লা।

রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আবদুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করায় এবং তাঁর মেয়ে এই মামলার সাক্ষ্য দেওয়ায় বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ রায়ে বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পেয়েছে বলে মনে করি।’