যশোরে ওয়াজ মাহফিলে চুরির ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার, জিডির সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
যশোর শহরতলির পুলেরহাটে তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় এক কিশোরীসহ দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে মাহফিলে চুরি ও জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় থানায় হওয়া সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এ ঘটনায় গত বুধবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় ৫০০ জিডি হওয়ার কথা গতকাল পুলিশ জানালেও আজ রোববার নতুন তথ্য দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন দিনে থানায় ৫০০ জিডি হয়েছে, এটা সত্য। তবে মাহফিলে চুরি ও জিনিসপত্র খোয়ানোর ঘটনায় জিডি হয়েছে ৮৪টি।
পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন। গত বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী মাহফিলের শেষ দিন শুক্রবার রাতে বক্তব্য দেন খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজাহারী ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আহমাদুল্লাহ। তাঁদের আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে সমগ্র মাহফিল এলাকায়। ওই মাহফিলে শত শত মানুষের মুঠোফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মাহফিলের শেষরাতে সোনার চেইন চুরির শিকার হন শহরের লোন অফিসপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাহারুন নাহার। এ ঘটনায় গতকাল কোতোয়ালি থানায় তিনি একটি চুরির মামলা করেন। নাহারুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহফিলের নারী প্যান্ডেলে ঢোকার সময় আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়। আবার সামনে থেকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। তখন তো জীবন যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে আমার গলা থেকে এক ভরি ওজনের সোনার চেইন ছিনতাই করে নেয় চোরেরা। থানায় গিয়ে মামলা করেছি। পুলিশ কয়েকজনকে আটকও করেছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে চুরি ছিনতাই মানা যায় না।’
এদিকে চুরির ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, মাহফিলের মাঠ থেকে হাতেনাতে তাঁদের আটক করে শুক্রবার রাতে মাহফিলের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে তাঁদের চুরির ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল গ্রামের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের নবির হোসেনের মেয়ে রাবেয়া খাতুন (৪৫)।
মাহফিলের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্র জানায়, মাহফিলের তিন দিনে মোট ২৯ জনের মুঠোফোন হারানোর তথ্য রয়েছে। সোনার গয়না হারানোর বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। এই কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, শেষ দিনে দুই নারীকে ধরে টেনেহিঁচড়ে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে আসেন তিনজন নারী। ওই দুই নারী গয়না ছিনতাই করেছে বলে তাঁদের অভিযোগ। পক্ষে-বিপক্ষে হট্টগোল শুরু হলে ওই দুজনকে পুলিশে দেওয়া হয়।
চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পরিচালক তরিকুল ইসলাম মুকুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি তাঁদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ছিল মাঠে। এত লোকজনের মধ্যে চোর, ছিনতাইকারী ও ভালো মানুষ কীভাবে আলাদা করবেন। তাঁরা সর্বাত্মকভাবে সুষ্ঠুভাবে মাহফিল শেষ করার চেষ্টা করেছেন।
জিডির সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
মাহফিলে চুরি ও জিনিসপত্র খোয়ানোর ঘটনায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত গত তিন দিনে কোতোয়ালি থানায় ৫০০-এর মতো জিডি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ। তবে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজ ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শারমিন আক্তার গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তিন দিনের ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিয়ে অসংখ্য মানুষের মুঠোফোন ও সোনার গয়না খোয়া গেছে। এ ঘটনায় গত তিন দিনে ৫০০টির মতো জিডি হয়েছে।’
তবে আজ কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াজ মাহফিলের ঘটনায় জিডির সংখ্যা নিয়ে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। তিন দিনে ৫০০টি জিডি হয়েছে—এটা সত্য। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের পর গতকাল রাতে তাঁরা জিডির তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখেন। এর মধ্যে মাহফিলের ঘটনায় ৮৪টি জিডি হয়েছে। ওসি বলেন, ‘সবই চুরি-ছিনতাই হয়েছে, ব্যাপারটা এমন নয়। হুড়োহুড়ির মধ্যে অনেকের গলার চেইন, মোবাইল হারিয়ে যেতে পারে। তিন দিনের মাহফিলে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।