প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত বন্য প্রাণীর সংখ্যা। সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১১১টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ৯৬টি হরিণ এবং ৪টি শূকরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ নিয়ে মোট ১১৫টি বন্য প্রাণীর মরদেহ উদ্ধার করা হলো। এ ছাড়া জীবিত ১৮টি হরিণ ও ১টি অজগর উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ বিকেল পর্যন্ত সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, নীলকমল, আলোরকোল, ডিমের চর, পক্ষীরচর, জ্ঞান পাড়া, শেলার চর এলাকায় মৃত বন্য প্রাণীগুলো পাওয়া গেছে। মৃত বন্য প্রাণীগুলোকে কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভেসে আসা ১৮টি জীবিত হরিণ ও ১টি অজগর উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হরিণ অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সুন্দরবন পানিতে তলিয়ে গেলে, এরা শুকনা কোনো স্থানে উঠতে পারেনি। মৃত হরিণের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বন বিভাগের উচিত, এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় হরিণের আশ্রয়স্থল বা উঁচু স্থান নির্মাণ করা, যাতে সেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে।
বনে কর্মরত বনকর্মীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানির কারণে সুন্দরবনের গহিনে চলে যাওয়ায় হরিণগুলো ভেসে গিয়ে সাঁতরে কূলে উঠতে পারেনি। এ জন্য হরিণগুলো মারা যেতে পারে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, রিমালের আঘাতে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের ফরেস্ট স্টেশন অফিস, ক্যাম্প ও ওয়াচ টাওয়ারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনের ভেতরে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগাযোগমাধ্যম ওয়্যারলেস টাওয়ারও। মিঠাপানির শতাধিক পুকুর লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন বিভাগের অবকাঠামোগত প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে বন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।