নারীর আত্মহত্যার চেষ্টা, ট্রেনের নিচ থেকে অক্ষত উদ্ধার

নারীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নরসিংদী রেলস্টেশনে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে ছিল ট্রেনটি। পরে ইঞ্জিন সচল হলে কর্ণফুলী মেইল ট্রেনটি পুনরায় গন্তব্যে রওনা হয়। গতকাল রাতেছবি: প্রথম আলো

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন। ট্রেন আর যাত্রীদের হই-হুল্লোড়ে মুখর। গতকাল বুধবার বিকেলে হঠাৎ করে সবার চোখে-মুখে নেমে আসে রাজ্যের বিস্ময়। আত্মহত্যা করবেন বলে কয়েক মুহূর্ত আগেও যে নারী ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়েছিলেন; তিনি অক্ষত আছেন। তাঁর বেঁচে যাওয়ার বিষয় নিয়ে স্টেশনজুড়ে চলছিল নানা কথাবার্তা।

গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলস্টেশনসংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীর নাম লতিফা বেগম (৭০)। তিনি নরসিংদী শহরের কাউরিয়াপাড়ার নতুন লঞ্চঘাটসংলগ্ন এলাকার জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী। তাঁকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল বিকেলে নরসিংদী রেলস্টেশনে ঢুকছিল কর্ণফুলী মেইল ট্রেন। ১ নম্বর লাইনে যাত্রাবিরতি দেওয়ার আগমুহূর্তে ওই নারী রেললাইনের ওপর লম্বালম্বি শুয়ে পড়েন। লোকোমাস্টার (চালক) তখন হঠাৎ হার্ড ব্রেক কষেন। এতে ওই নারী দ্বিতীয় বগির নিচে থাকা অবস্থাতেই ট্রেনটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পুরোপুরি থেমে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে সড়ক পথে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে রওনা হন। আবার অনেককেই পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত সোয়া আটটার দিকে ইঞ্জিন সচল হলে ট্রেনটি আবার গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়।

এ দিকে আত্মহত্যা চেষ্টার কারণ নিয়ে জানতে চাইলে লতিফা বেগম বলেন, ডায়াবেটিস ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি। তাঁর স্বামীও অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে এবং ছেলে স্থানীয় একটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। ছেলের বেতনের আট হাজার টাকার মধ্যে অর্ধেকই ব্যয় হয় দুজনের চিকিৎসা আর ওষুধের পেছনে। এ কারণে সংসারই ঠিকমতো চলছে না। তাই ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন।

এসব বিষয়ে নরসিংদী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, ওই নারীকে বাঁচাতে কর্ণফুলী মেইল ট্রেনের লোকোমাস্টার হার্ড ব্রেক কষেন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি শরীরের কোথাও আঘাত পাননি, পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তাঁকে এরই মধ্যে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর তিন ঘণ্টা পর ট্রেনটির ইঞ্জিন সচল হলে আবার রাজধানীর উদ্দেশে যাত্রা করে।