চিনাবাদাম চাষে ভাগ্য বদল
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার একটি হতদরিদ্র গ্রামের মানুষ চিনাবাদাম চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। অনাবাদি জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে আর্থিকভাবে তাঁরা লাভবান হচ্ছেন। তাঁদের বাদাম চাষের সফলতার গল্প আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামটি ‘বাদাম ভিলেজ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
গত শুক্রবার উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী হরিনাকান্দি বাদাম ভিলেজ গ্রামের পাশে চাতল হাওরে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের বুকে বাদামখেতের সবুজ পাতার সমারোহ। চোখজুড়ানো সবুজ পাতায় পাতায় দুলছে সাদা রঙের জোটা জোটা বাদাম। তরুণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী একদল মানুষ নিজেদের লাগানো বাদামখেতে কাজ করছেন। কেউ কেউ বাদাম তুলে বিক্রির জন্য মজুদ করছেন। আবার কেউ কেউ লাগানো বাদামখেতের ফলন ঘুরে ঘুরে দেখছেন। বাদামখেতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানতালে বাদাম সংগ্রহ ও শুকানোর কাজ করছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, হরিনাকান্দি গ্রামের ১১০ জন কৃষক ২৫০ বিঘা অনাবাদি জমিতে চিনাবাদাম আবাদ করেছেন। গ্রামটি বাদাম ভিলেজ নামে অত্র এলাকায় পরিচিত। তাঁদের সফলতার গল্প আশপাশ কয়েক গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের দেখানো পথে ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের আরি ১০ গ্রামে এবার চিনাবাদাম আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে তাঁদের পাশে রয়েছে।
কাজের ফাঁকে বাদামখেতে কথা হয় হরিনাকান্দি গ্রামের যুবক মনিন্দ্র দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় পলি পড়ে চাতল হাওরে থাকা বোরোখেত চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আমরা গ্রামবাসী এতে দুশ্চিন্তায় পড়ি। এরপর কৃষি বিভাগের পরামর্শে এসব জমিতে চিনাবাদাম চাষ শুরু করি। শুরুতে আমরা ২০ থেকে ২৫ জন মিলে চিনাবাদাম চাষ করি। লাভের দেখা পাওয়ায় এবার পুরো গ্রামের প্রতিটি পরিবারের লোকজন এবার চিনাবাদাম চাষ করেছেন।’
হরিনাকান্দি গ্রামের যুবক লিটন দাস। তিনি সিলেট পলিটেকনিক কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে বাপ–দাদার পথ অনুসরণ করে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন। তিনি নিজেও দুই কেদার জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে খুশি।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রাখাল দাস জানান, গ্রামটিতে ১৪০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ১১০ পরিবার এবার চিনাবাদাম চাষ করায় গ্রামটি বাদাম ভিলেজ নামে পরিচিতি পেয়েছে। তিনি বলেন, অগ্রহায়ণ বা পৌষ মাসে বাদামের আবাদ করে বৈশাখ মাসের শেষ দিকে কিংবা জ্যৈষ্ঠ মাসে বাদাম বিক্রি করা যায়। পাইকারি দরে এসব বাদাম গ্রাম থেকে এসে কিনে নিয়ে যায় বলে জানান। তিনি পাঁচ কেদার জমিতে বাদাম আবাদ করে কেদারপ্রতি ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন।
বাদামচাষি হীরালাল দাশ জানান, সাত কেদার জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। প্রতি কেদারে তাঁর খরচ হয়েছে ছয় হাজার টাকা। কেদারপ্রতি বাদাম পেয়েছেন ছয় থেকে সাত মণ। কেদারপ্রতি খরচ বাদে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের একটি দরিদ্রপিড়িত গ্রাম হরিনাকান্দি। গ্রামের মানুষ অভাব–অনটনের সঙ্গে লড়াই করে দীর্ঘদিন ধরে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন চিনাবাদাম চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন। সম্ভাবনাময় এ সুযোগকে কাজে লাগাতে কৃষি বিভাগকে আরও সহযোগিতা করতে হবে।