মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে হত্যা, আদালতে ছেলের স্বীকারোক্তি

আদালতপ্রতীকী ছবি

চুয়াডাঙ্গা শহরের পলাশপাড়ায় নামাজ পড়া অবস্থায় ইতালিপ্রবাসী ব্যবসায়ী (৫২) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নিহত ব্যক্তির একমাত্র কিশোর ছেলে (১৭)। আজ রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিপন হোসেন তার জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে তাকে যশোর পুলেরহাটের শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে বাড়িতে তারাবিহর নামাজ পড়া অবস্থায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে ওই প্রবাসী ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই সদর থানা-পুলিশ নিহত ব্যক্তির বাড়ির একটি কক্ষের খাটের নিচ থেকে মাদ্রাসায় পড়া ছেলেকে আটক করে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির মেয়ে বাদী হয়ে তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে আজ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রীকে সাক্ষী করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা আদালতের পরিদর্শক নাসির উদ্দিন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, নিজ বাবাকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার কিশোরকে আজ বিকেলে চুয়াডাঙ্গার আমলি আদালতে সোপর্দ করে থানা-পুলিশ। আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিপন হোসেন তাকে খাস কামরায় নিয়ে ঘটনার পূর্বাপর জানতে চান। তখন আসামি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে চাইলে আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক দেওয়ান তারিকুল ইসলাম বলেন, বাবার হত্যায় অভিযুক্ত কিশোরকে সময় স্বল্পতার কারণে কারাগারের নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে। কাল সোমবার সকালে তাকে যশোর পুলেরহাটে কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানো হবে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ১১ মার্চ তিনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বিবাদী তাঁর একমাত্র ভাই। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র। কয়েক বছর ধরে সে মুঠোফোনে বিভিন্ন গেম, ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউবে আসক্ত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে মাদক সেবনেও আসক্ত হয়। বিষয়টি বাবার দৃষ্টিগোচরে এলে বাবার সঙ্গে তার (বিবাদীর) মনোমালিন্য হয়। বাবার কথা না শুনে সে মুঠোফোন ও মাদক নিয়ে পড়ে থাকত। ২২ মার্চ (ঘটনার দিন) সকাল নয়টার দিকে বাবা বিবাদীর কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেন। এতে বিবাদী ক্ষিপ্ত হয় এবং বাবাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। রাত পৌনে আটটার দিকে বাবা নামাজ পড়তে থাকলে বিবাদী আগের ঘটনার জেরে ধারালো ছুরি দিয়ে পেছন থেকে পিঠে, কাঁধে, কপালে ও কনুইতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। বাবার চিৎকারে তিনি ও তাঁর মা বিবাদীর হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দ্রুত সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান।

আদালত সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই কিশোর তার বাবার হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলে, প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর বাবা-মায়ের মধ্যে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত, যা নিয়ে সে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ছিল। এর মধ্যে শনিবার মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ায় সে বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এরপর বাবাকে রাতে শারীরিকভাবে আঘাত করার সিদ্ধান্ত নেয়। আঘাতের আগে সে গাঁজা সেবন করে। কিশোর আদালতকে জানায়, বাবাকে শারীরিকভাবে আঘাতের সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।