অবসরজীবনের প্রশান্তি খুঁজে পেলেন চাষাবাদে

নিজের বাগানে কাজ করে সময় কাটান গাজী ইনসান উদ্দিনছবি: প্রথম আলো

ওমানে একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। দুই ছেলের জন্মও সেখানে। করোনার কারণে ২০২১ সালে চাকরি হারিয়ে সপরিবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এখন বাড়ি লাগোয়া প্লটে ফসল ফলিয়ে সুন্দরভাবে অবসরজীবন কাটাচ্ছেন খুলনার গাজী ইনসান উদ্দিন (৬৬)।

গাজী ইনসান থাকেন খুলনা নগরের প্রান্তিকা আবাসিক এলাকায়। চার কাঠা করে দুটি প্লটের একটিতে বাড়ি করে থাকেন তিনি। অন্য প্লটটিতে চাষাবাদ করছেন। ছোট ওই জায়গার মধ্যেই তিনি পরিকল্পিতভাবে পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, শিম, কুমড়া, কচু, বিট, বেগুন, টমেটো, ঝিঙে, পুঁইশাক, লালশাক, গাজর, ধনেপাতাসহ নানা রকমের সবজি। ইট-পাথরের খটখটে শহরের বুকে তাঁর ওই একখণ্ড সবুজ খেত দৃষ্টি কাড়ে যেকোনো মানুষের।

ইনসান উদ্দিন তাঁর খেতের সবজি প্রতিবেশীদেরও দেন। এ ছাড়া কেউ তাঁর খেত দেখতে এলে ধরিয়ে দেন টমেটো, লাউ, বিট। তাঁর প্লটে ছোট ছোট বেড করে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। লাউ, শিম, ঝিঙের জন্য বাঁশ, কাঠ ও নেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। টমেটো লাগানোর অংশটিও আলাদাভাবে ছোট মাচা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খেতজুড়ে ছড়িয়ে আছে নান্দনিকতার ছোঁয়া।

অল্প জায়গার মধ্যেই গাজী ইনসান উদ্দিন পরিকল্পিতভাবে পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, শিমসহ নানা রকমের সবজি চাষ করেছেন
ছবি: প্রথম আলো

ইনসান উদ্দিন বলেন, ‘ছোট থেকে কায়িক পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করেছি। বড় হয়েছি, লেখাপড়া শিখেছি। তাই এখন আর বসে থাকতে ভালো লাগে না। প্রশান্তি খুঁজতে কৃষিকাজ করছি। যখন নিজের খেতের সবজি দেখি, তখন খুব ভালো লাগে। সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।’

গত বছরের মাঝামাঝিতে ইউটিউব দেখে চাষাবাদে আগ্রহ জাগে তাঁর। এরপর পড়ে থাকা প্লট পরিষ্কার করে শুরু করেন চাষাবাদ। এখন আর বাজার থেকে সবজি কেনার প্রয়োজন হয় না তাঁর।

ইনসান উদ্দিন তাঁর খেতের সবজি প্রতিবেশীদেরও দেন
ছবি: প্রথম আলো

ইনসান উদ্দিনের দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে পড়ছেন। ছোট ছেলে খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। খেতের মধ্যে বসেই নিজের জীবনের গল্প শোনালেন ইনসান উদ্দিন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায়। এসএসসি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। এরপর চলে আসেন খুলনায়। ভর্তি হন আযম খান কমার্স কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কাতারে যান। সেখানে সাড়ে চার বছর ছিলেন। এরপর চলে যান ওমানে। ২০২১ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। বিদেশে চাকরি করার সময়ই খুলনা নগরের প্রান্তিকা আবাসিক এলাকায় চার কাঠা করে দুটি প্লট কেনেন, বড় বাজারের সোহরাওয়ার্দী মার্কেটে কেনেন তিনটি দোকান। বর্তমানে ওই দোকান ভাড়া থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে সংসার চলছে তাঁর।