বগুড়ায় সদ্য সাবেক এমপি সাহাদারা মান্নানসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বগুড়ার সোনাতলায় আনন্দমিছিলে হামলা করে স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেন (১৪) হত্যার ঘটনায় এ মামলা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাব্বিরের বাবা শাহীন আলম বাদী হয়ে সোনাতলা থানায় মামলাটি করেন। এ মামলায় আরও ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলায় হত্যার নির্দেশদাতা উল্লেখ করে সাবেক সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানকে আসামি করা হয়।
এর আগে ৫ আগস্ট বিকেলে সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের শিহিপুরে আনন্দমিছিলে হামলায় স্কুলছাত্র সাব্বির নিহত হয়। সে গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর ইউনিয়নের তেলিহাটা গ্রামের শাহীন আলমের ছেলে। সাব্বির গাবতলীর সুখানপুকুর বালক উচ্চবিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লীটন, সাহাদারার ছেলে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মেদ সাখাওয়াত হোসেন, সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নবীন আনোয়ার, দিগদাইড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিরঞ্জন চন্দ্র রায়, দিগদাইড় ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাবতলীর সুখানপুকুর নতুনপাড়ার বাসিন্দা সাহানুর ইসলাম সাকিল।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ৫ আগস্ট বিকেলে এলাকায় আনন্দমিছিল বের করা হয়। দিগদাইড় ইউনিয়নের শিহিপাড়ায় ছাত্র-জনতার আনন্দমিছিলে হামলা হয়। এ সময় আনন্দমিছিলে যোগ দেওয়া স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেন আসামিরা।
সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবু কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র-জনতার আনন্দমিছিলে হামলায় স্কুলছাত্র সাব্বিরকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আওয়ামী লীগের ১৪১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা
বগুড়ায় শ্রমিক দলের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও ককটেল হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৪১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছামছুল আলম বাদী হয়ে আজ শুক্রবার সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দারকে। মামলায় ১৪১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শহরের টেম্পল সড়কে শ্রমিক দলের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালান। এ সময় কার্যালয়ের তালা ভেঙে চেয়ার-টেবিল, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৪১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০–২৫০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।