কয়রায় ব্যবসায়ীর পা ভাঙলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনার কয়রা উপজেলায় প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তাঁদের হামলা ও মারধরে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীর পা ভেঙে গেছে। ভুক্তভোগীর নাম মুনছুর আলী। তিনি কয়রা বাজারের ‘মায়ের দোয়া মেশিনারিজ’ নামের একটি দোকানের মালিক।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যবসায়ী মুনছুর আলীর ভাতিজা মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন, ‘কয়রা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম ও সদস্যসচিব নুরুল আমিন কয়রায় বিএনপির দুটি আলাদা প্রোগ্রাম করেন। আমরা বিএনপি সমর্থক হিসেবে আহ্বায়কের প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ায় সদস্যসচিব নুরুল আমিন আমাদের বেশ কিছুদিন ধরে হুমকি–ধমকি দিচ্ছিলেন। গতকাল আমাকে ফোনে হুমকি দেন এবং বলেন, “তুই বাজারে ব্যবসা করতে পারবি না। কয়রা বাজারে ব্যবসা করতে চাইলে এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে।” আমি ফোনে এর প্রতিবাদ করি।’

মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমিও কয়রা বাজারে ব্যবসা করি। আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম “ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং”। আমি ফোনে প্রতিবাদ করায় নুরুল আমিন ক্ষিপ্ত হয়ে ২০ থেকে ৩০ জন নেতা-কর্মী নিয়ে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ পাশের কয়েকটি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ ঘটনায় আমার ছোট চাচা ব্যবসায়ী মুনছুর আলীর পা ভেঙে গেছে এবং আমার ছোট ভাই মিলন, চাচাতো ভাই আল মামুন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে মুনসুর চাচার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, গতকাল দুপুরে উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল ইসলামসহ তিনজন বিএনপি নেতা কয়রা বাজারের কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সামনে যান। সেখানে ‘ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং’দোকানের মালিক মনিরুজ্জামানকে ডেকে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নুরুল আমিনের সঙ্গে তাঁর কী হয়েছে, জানতে চান তাঁরা। এ সময় তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান ও বিএনপি নেতা রবিউল ইসলামের মধ্য মারামারি বেঁধে যায়। এতে বিএনপি নেতা রবিউল ইসলাম আহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কিছুক্ষণ পরই কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত হন। এরপর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নুরুল আমিন সেখানে এলে তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা পুলিশের সামনেই ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামানকে মারধর শুরু করেন। তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে মুনছুর আলীসহ কয়েকজন আহত হন।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নুরুল আমিন বলেন, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে জমিজমা ও টাকা নিয়ে ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামানের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি মীমাংসার জন্য গতকাল বসার কথা ছিল, কিন্তু মনিরুজ্জামান আসেননি। এ জন্য তাঁর কাছে হাজির না হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ‘কথা বলার মধ্যে আমার ওপর সে ক্ষিপ্ত হয়। পরে আমি ওই স্থান থেকে চলে আসি। পরে শুনেছি সেখানে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাঁরা মিথ্যা বানোয়াট কথা ছাড়াচ্ছে।’

নিজের সামনেই মারামারি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘আহত ব্যবসায়ীরাও বিএনপি কর্মী। গতকাল কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের সামনে মূলত বিএনপির দুই পক্ষের মধ্য মারামারির ঘটনা ঘটে। আমি ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। তবে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’