ছেলের মৃত্যুতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা মা, ভেঙে গেল বহুদিনের লালিত স্বপ্ন
ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বৃদ্ধা ক্রাইসা মারমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না তাঁর প্রাণবন্ত ছেলে আপরশি মারমা এভাবে মারা যেতে পারেন। তাঁর চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। পুরো পরিবার শোকে মুহ্যমান।
অনেক কষ্ট করে খাগড়াছড়ির নিভৃত গ্রাম থেকে আপরশিকে তাঁর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিল উচ্চ শিক্ষার জন্য। স্বপ্ন ছিল শিক্ষা শেষে বড় চাকরি করবেন। সব স্বপ্ন ভেঙে গেল প্রাণবন্ত তরুণের আকস্মিক মৃত্যুতে।
গত সোমবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হলের পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে আপরশি মারমার মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী ২২ বছর বয়সী আপরশির মৃতদেহ হলের ছাদের পানির ট্যাংকের রডের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান আপরশি আত্মহত্যা করেছেন।
আপরশি মারমার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার গুগড়াছড়ি গ্রামের নিয়ং কারবারি পাড়ায়। তিনি আবদুস সালাম হলের ২১২ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
আপরশি মারমার সহপাঠী ও আবদুস সালাম হলে একই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিন বলেন, আপরশি প্রায়ই মালেক উকিল হলে খাবার খেতে যেতেন। সেখানে তাঁর বন্ধু ও বড় ভাইদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। তবে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল, সে ব্যাপারে তাঁরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি ওই শিক্ষার্থীর লাশ ঝুলে থাকার খবর পান। তাৎক্ষণিক তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠান। এরপর তিনি নিজে সেখানে যান। প্রাথমিকভাবে লাশ দেখে তাদের মনে হয়েছে, ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটল, সেটা তাঁরা জানতে পারেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আপরশি মারমা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে খাগড়াছড়ির নিয়ং কারবারি পাড়ায় আপরশি মারমার মৃত্যুর খবর এলে নিভৃত পাহাড়ি গ্রামটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। আপরশির বড় ভাই উলাপ্রু মারমা প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা তিন ভাই ও তিন বোন। আপরশি ছিলেন সবার ছোট। আড়াই বছর আগে তাঁদের বাবা সুইথোয়াই মারমা মারা গেছেন। তাদের পরিবারে মধ্যে আপরশি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। স্থানীয় মাইছছড়ি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।
উলাপ্রু জানান, আপরশি ছাড়া তাঁদের পরিবারের আর কেউই তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। অন্যরা সবাই ছোট খাট কাজ কর্ম করেন। পরিবারের সবার আশা ছিল আপরশি পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি করবে। তারা মানতেই পারছেন না আপরশি আত্মহত্যা করতে পারেন। তাঁদের মা ক্রাইসা মারমা ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের ধারণা আপরশি মারমাকে হত্যা করা হয়েছে। বিষটির সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন তাঁরা।
নিয়ং কারবারি পাড়ার লোকেরও আপরশির এমন মৃত্যুতে শোকাহত। মেধাবী আর প্রাণবন্ত তরুণটি এমন করে আত্মহত্যা করতে পারেন এটা গ্রামবাসী ভাবতেই পারছে না। পরিবারে সদস্যদের মতো তারাও চান আপরশির মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হোক।